কলকাতা: শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যেই 'স্বদেশিয়ানা'য় জোর দেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা RSS-এর প্রধান মোহন ভাগবতও বেশি করে দেশীয় পণ্য কিনতে আবেদন জানান সকলকে। দেশের কৃষক, ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার কথা বলতে শোনা যায় তাঁদের। আর তার পর পরই GST-র কাঠামোয় রদবদল ঘটাল কেন্দ্রীয় সরকার। ৫ এবং ১৮ শতাংশ রেখে, বাকি স্ল্যাব তুলে দেওয়া হল। নতুন ৪০ শতাংশের স্ল্যাব যুক্ত করা হলেও, শতাধিক পণ্যের উপর থেকে GST-র কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো 'শুল্ক-শাস্তি'র জেরে বাজারে যে টালমাটাল অবস্থা দেখা দিয়েছে, তা সামাল দিতেই কেন্দ্র এমন পদক্ষেপ করল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। (GST Reduction)
এবিপি আনন্দে এ নিয়ে মুখ খোলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শৈবাল কর। তিনি বলেন, "প্রথম যেদিন কার্যকর হয়, সেদিন থেকেই প্রশ্ন ছিল। চারটি স্ল্যাব নিয়ে গোড়াতেই প্রশ্ন ওঠে। এতদান, এতগুলি স্ল্যাব, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ধাক্কা খায় চাহিদা। এতদি পর যে সংশোধন করা হল, তা বোধোদয়ই। আমার তো মনে হয়, এটা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে করা হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক চাপানোর পর বিদেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা কমে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন বাড়াতে গেলে, চাহিদা বজায় রাখতে গেলে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। দাম কমালে তবেই জিনিস কিনতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ১০০-১৫০ পণ্যের উপর থেকে GST কমিয়ে ১২, ১৮ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে,যা চাহিদা বাড়াতে সাহায্য় করবে।" (GST News)
এতদিন ধরে ৫, ১২, ১৮, ২৮ শতাংশের মোট চারটি স্ল্যাব চালু ছিল GST-র। জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমার উপরও ১৮ শতাংশ করে GST আদায় করা হতো, যাতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ছিলেন। বিমার আওতার বাইরে চলে যাচ্ছিলেন বহু মানুষ। নতুন ঘোষণায় ১২ এবং ২৮ শতাংশের স্ল্যাব পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে। পড়ে রয়েছে ৫ ও ১৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ৪০ শতাংশের স্ল্যাব যুক্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের 'শুল্ক-শাস্তি'র মুখে পড়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল কিনা প্রশ্ন উঠছে।
যদিও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, এর সঙ্গে আমেরিকার চাপানো শুল্কের কোনও সংযোগ নেই। দীর্ঘমেয়াদি সংশোধনেরই অংশ এই রদবদল। এমনকি মোদিকেও বলতে শোনা যায়, "বহুবিধ এই সংস্কারে আমাদের নাগরিকদের জীবনের উন্নতি হবে। সকলের জন্য সহজতর হয়ে উঠবে ব্যবসা। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদাররা লাভবান হবেন।"
তবে হঠাৎ যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, এব্যাপারে একমত দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'GST-র কাঠামো পরিবর্তন, GST-র হার লাঘবের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। কিন্তু আট বছরের সময়কাল অতিরিক্ত। GST-র ওই কাঠানো চালুই করা উচিত হয়নি। আট বছর ধরে এই কথা লাগাতার বলে আসছিলাম আমরা। কিন্তু সরকার আমাদের কোনও কথা কানে তোলেনি, GST-তে রদবদল ঘটায়নি। তাহলে এখন কেন সরকার এই পরিবর্তন: শ্লথ বৃদ্ধি? গৃহস্থের ঋণবৃদ্ধি? গৃহস্থের সঞ্চয়ে টান পড়া? বিহারের নির্বাচন? ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো শুল্ক? নাকি উপরের সবক'টি'?
রাশিয়াক থেকে তেল কেনার দরুণ শাস্তিস্বরূপ ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। ফলে ভারতের উপর আমেরিকার চাপানো শুল্ক বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়ে যায়। তার পর থেকে ভারতকে লাগাতার আক্রমণও করে আসছেন ট্রাম্প। ভারতের অর্থনীতিকে তিনি 'মৃত' বলেও উল্লেখ করেন। সেই আবহেই স্বাধীনতা দিবসে GST-তে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত শোনা যায় মোদির ভাষণে। শেষ পর্যন্ত বুধবার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হল। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন হারে GST কার্যকর হবে।