নয়াদিল্লি: মিশে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বন্ধকি ঋণ সংস্থা HDFC Ltd এবং দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক HDFC ব্যাঙ্ক। আগামী ১ জুলাই  দুই সংস্থা পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তাতে সম্মিলিত ভাবে বাজারে তাদের মূলঝনরে পরিমাণ হবে ১৪.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। এতে শেয়ারহোল্ডার থেকে গ্রাহক, দুই পক্ষই উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। দেশের অর্থনীতির জন্যও এই পদক্ষেপ সুখবর বয়ে আনতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। 


আগামী ৩০ জুন পৃথক ভাবে দুই সংস্থার বোর্ড মিটিং রয়েছে। সেটিই হবে শেষ পৃথক মিটিং। ১ জুলাই থেকে দুই সংস্থা মিশে যাবে। তবে সাইনবোর্ডে শুধুমাত্র HDFC Bank-ই লেখা থাকবে। দুই সংস্থা মিশে যাওয়ার পর ৬০ অনূর্ধ্ব কর্মীদের রেখে দেওয়া হবে এবং তাঁদের বেতনও কমানো হবে না বলে জানিয়েছেন HDFC-র চেয়ারম্যান দীপক পারেখ। কারণ বন্ধক ঋণ সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য পুরনো কর্মীদের সাহায্য লাগবে বলে মত তাঁর।


দুই সংস্থার এই মিশে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই সিলমোহর দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (IRDAI), ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (NCLT) এবং কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার তরফেও মিলেছে অনুমোদন। HDFC বিমা সংস্থা এবং HDFC জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার অধিগ্রহণেও অনুমোদন দিয়েছে IRDAI. HDFC Ltd-র সম্পূর্ণ শেয়ার HDFC Life এবং HDFC ERGO-র সম্পূর্ণ শেয়ার HDFC ব্যাঙ্ক হস্তান্তরণে মিলেছে ছাড়পত্র।


আরও পড়ুন: Stock Market Closing: ইতিহাস গড়ল ভারতের শেয়ার বাজার, ১৯,০০০ ছুঁলো নিফটি, রেকর্ড গড়েছে সেনসেক্স


২০২২ সালের এপ্রিল মাসে দুই সংস্থাকে একত্রিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সময় RBI-এর তরফে CRR এবং SLR সুদের হার যথাক্রমে ২৭ এবং ২২ শতাংশে আনা হয়। ঝুঁকি এবং উত্তরাধিকারের প্রশ্নও জড়িয়েছিল। ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর HDFC-র ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদ ছাড়েন আদিত্য পুরি। তার পর থেকেই দুই সংস্থাকে একত্রিত করে দেওয়ার ভাবনা মাথাচাড়া দেয়।


অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণে উত্তরোত্তর বৃদ্ধিকে মাথায় রেখে RBI-এর তরফে নন-ব্যাঙ্কিং অর্থনৈতিক সংগঠনগুলির উপর রাশ আরও শক্ত করা হচ্ছিল। ব্যাঙ্কের মতোই নানা বিধিনিয়ম ঘাড়ে চাপছিল। একই সঙ্গে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে SBI-এর সঙ্গে বাড়ছিল প্রতিযোগিতা। তাতেই একত্রীকরণের ভাবনা আরও জোর পায়। তবে এর ফলে HDFC Ltd-ই বেশি লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ তাদের ব্যবসা তেমন লাভজনক ছিল না। একত্রীকরণের ফলে অভ্য়ন্তরীণ খরচ-খরচাও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার বন্ধকি ঋণ ব্যবসায় কড়া প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছিল না HDFC ব্য়াঙ্ক। তাদের হাত আরও শক্ত হবে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের।


এই একত্রীকরণের ফলে, HDFC ব্যাঙ্কের ৪২টি শেয়ার HDFC Ltd-এর প্রতি ২৫টি শেয়ারে ঢালা হবে। এর পর HDFC ব্যাঙ্কের ১০০ শতাংশ শেয়ার পাবলিক শেয়ার হোল্ডারের হাতে উঠবে। HDFC Ltd-এর বর্তমান শেয়ার হোল্ডারদের হাতে ব্যাঙ্কের ৪১ শতাংশ শেয়ার থাকবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকবে ৮ শতাংশ, যা পরে বাড়তেও পারে।


২৭ জুনের হিসেব অনুযায়ী, HDFC-র শেয়ারে ১.৫৯  শতাংশ বৃদ্ধি চোখে পড়েছে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের শেয়ারের মূল্য ছিল ২,৭৬২.৫০ টাকা। HDFC ব্যাঙ্কের শেয়ার বেড়েছে ১.৩৮ শতাংশ হারে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের শেয়ারের মূল্য ছিল ১,৬৫৮.০০ টাকা। দুই সংস্থার একত্রীকরণের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে HDFC এবং SBI-এর মধ্যে। কারণ মোট সম্পদের নিরিখে এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে SBI. দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে HDFC. তৃতীয় স্থানে রয়েছে ICICI.


তার পর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, কোটাক মহিন্দ্রা ব্য়াঙ্ক, ইন্ডাসিন্ড ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইয়েস ব্যাঙ্ক এবং IDBI ব্যাঙ্ক। আগামী পাঁচ বছরে ব্যালেন্স শিট দ্বিগুণ করে তোলাই লক্ষ্য HDFC ব্য়াঙ্কের।