যখন মানুষ বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা যত দ্রুত সম্ভব কাজ এগিয়ে বাড়ি কেনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে চায় এবং তাড়াতাড়ি সম্পত্তিটি নিজের নামে করে নিতে চায়। অনেক সময় এই তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই গৃহঋণের যে প্রস্তাব তাদের কাছে প্রথমে আসে সেটাই তারা গ্রহণ করে নেয়। ফলে কখনও বাড়ি কিনতে গিয়ে মানুষ এমন গৃহঋণের ফাঁদে পড়ে যায় যেখানে তাদের অত্যধিক উচ্চ সুদের হারে গৃহঋণের মাসিক কিস্তি বা ইএমআই পরিশোধ করতে হয়। বাড়ি কেনা ব্যক্তিরা এক বার এই ভুল করে ফেললে, কালক্রমে, ওই কিস্তি পরিশোধ করা অনেক সময় তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এই ক্ষেত্রে, বাড়ির মালিকরা বাড়ির ঋণের মাসিক কিস্তি কমাতে একটি রাস্তা বেছে নিতে পারেন, তা হল গৃহ ঋণের বকেয়া অংশ স্থানান্তর করা।
বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর বলতে কী বোঝায় ?
গৃহ ঋণের বকেয়া অংশ স্থানান্তর করার সুবিধা আজকাল বেশিরভাগ ঋণ প্রদানকারী সংস্থাই দিচ্ছে। এই সুবিধার মাধ্যমে ঋণগ্রহীতারা তাদেঁর বর্তমান ঋণ প্রদানকারী সংস্থার তুলনায় আরও ভাল ঋণ পরিশোধ শর্তাবলী ও অফার দেওয়া অন্য ঋণ প্রদানকারীর কাছে তাঁদের গৃহ ঋণ স্থানান্তর করতে পারেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, যখন অন্য ঋণদাতা সংস্থা গৃহ ঋণে সুদের হার কম করে নেওয়া বা ঋণের মেয়াদ বা মাসিক কিস্তি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে রফার সুবিধা দেয়, তখন ঋণগ্রহীতারা এই বিকল্প বেছে নেন।
আসুন এখন আমরা বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘুরে আসি।
বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় ধাপগুলি সাধারণত এই রকম হয়:
- আপনি যদি একটি গৃহ ঋণের বকেয়া অংশ স্থানান্তর জন্য পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনাকে প্রথমেই যা করতে হবে তা হল আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্তমান ঋণদাতাকে অবহিত করা। ঋণদাতা পরিবর্তন করার জন্য তাদের একটি চিঠি পাঠানো বা গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তর ফর্ম পূরণ করা।
- যদি আপনার বর্তমান ঋণদাতার আপনার গৃহ ঋণ অন্য ঋণদাতাকে হস্তান্তর করতে কোনও আপত্তি না থাকে তবে তারা একটি আপত্তি না থাকার শংসাপত্র বা এনওসি অথবা একটি সম্মতিপত্র প্রদান করবে।
- আপনি সেই এনওসি বা সম্মতিপত্র হাতে পেয়ে গেলে, আপনার নতুন ঋণদাতার কাছে সমস্ত নথি এবং সম্পত্তির কাগজপত্র-সহ আবেদন জানান এবং এর পর আপনার গৃহ ঋণের বকেয়া হস্তান্তরে তাদের অনুমোদন এবং নতুন ঋণ চুক্তিপত্র নিয়ে আপনার কাছে আসার অপেক্ষা করুন।
দয়া করে মনে রাখবেন, সমস্ত বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তরের আবেদনকেই নতুন আবেদন হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তাই অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগে। আপনার নতুন ঋণদাতা ঋণের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার দ্বারা প্রদত্ত সব নথি যাচাই করবে। সুতরাং, ধৈর্য ধরুন।
- যদি আপনার নতুন ঋণদাতা আপনার গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তরের অনুরোধ অনুমোদন করে, তাহলে তারা আপনার পুরানো ঋণদাতার পাওনা অর্থ মিটিয়ে দেবে। এর পরে, আপনার পুরানো ঋণদাতার তরফে আগের ঋণ বন্ধের খবর আসার জন্য অপেক্ষা করুন।
- আপনার পুরানো ঋণদাতা যখন জানাবে যে তাদের কাছে থাকা আপনার গৃহ ঋণ অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হয়েছে, তখন নতুন ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করার আগে প্রথমেই আপনার নতুন ঋণদাতাকে সমস্ত ফি এবং চার্জ মিটিয়ে দিতে হবে। এই সবকিছু মিটে যাওয়ার পরে, নতুন গৃহ ঋণের কিস্তির টাকা আপনার বর্তমান ঋণদাতাকে দেওয়া শুরু করবেন।
আপনি যদি গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেন, তাহলে জেনে রাখুন নতুন ঋণদাতা আপনাকে গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তর বাবদ একটি মাসুলও জমা দিতে বলবে। এই মাসুল গৃহ ঋণের পরিমাণের শতাংশ হিসাবে নির্ধারিত হয় এবং এটি সাধারণত মোট গৃহ ঋণের 0.5% থেকে 1% এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
যেহেতু গৃহ ঋণের পরিমাণ বেশ বড়সড় হয়, তাই গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তরের মাসুলও অনিবার্যভাবে বড় অঙ্কেরই হয়।
তাই ঋণগ্রহীতাদের অবশ্যই সতর্ক ভাবে বিবেচনা করার পরে বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তরের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। গৃহ ঋণের বকেয়া পরিমাণ এমনভাবে স্থানান্তর করা দরকার যেখানে স্থানান্তর বাবদ হওয়া খরচ যেন স্থানান্তরের ফলে হওয়া সাশ্রয় ও কম মাসিক কিস্তি প্রদানের মাধ্যমে বাঁচানো টাকার মধ্যে দিয়ে উঠে আসে। ঋণগ্রহীতা যেন কম সুদ দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন।
এই কারণেই, যাঁরা গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তরের জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছেন তাঁদের বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর বা হোম লোন ব্যালেন্স ট্রান্সফার ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর কী?
বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর হল একটি সহজ ব্যবহারযোগ্য অনলাইন পদ্ধতি যা একজন ঋণগ্রহীতাকে হিসেব কষে বুঝিয়ে দেয় তিনি ঋণ স্থানান্তর করতে চাইলে আসলে কত টাকা সাশ্রয় করবেন। এই ধরণের ক্যালকুলেটর ইন্টারনেটে সহজলভ্য এবং এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাদের মৌলিক কিছু তথ্য যেমন মোট অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ, ঋণগ্রহীতার বিদ্যমান অবশিষ্ট ঋণের মেয়াদ, বর্তমান সুদের হার অর্থাৎ তাঁরা বর্তমানে যে সুদের হারে তাঁদের গৃহ ঋণ পরিশোধ করে চলেছেন এবং তাদের নতুন ঋণদাতা অনুমোদিত সুদের হার প্রকাশ করতে হয়।
একবার একজন গৃহ ঋণগ্রহীতা এই তথ্য প্রদান করলে, বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দেখিয়ে দেয়। ফলে ঋণগ্রহীতা বকেয়া ঋণ স্থানান্তর করা বা না করার বিকল্প বেছে নিতে পারেন। ঋণগ্রহীতা জানতে পারেন ঋণ হাতবদল করলে তাঁর কত টাকা বাঁচবে এবং হস্তান্তরের খরচই বা কত হতে পারে। এর পর সবদিক ভেবেচিন্তে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
শেষে বলা যায়, বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর নিম্নলিখিত পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে:
- এটি একজন ঋণগ্রহীতাকে জানিয়ে দেয়, গৃহ ঋণের বকেয়া স্থানান্তর করলে তিনি আসলে কত টাকা বাঁচাতে পারবেন, এবং তার ফলে একজন ঋণগ্রহীতা গৃহ ঋণের বকেয়া হস্তান্তর সঠিক বিকল্প হবে কী না- সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
- বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা সহজ এবং এটি একেবারে সঠিক তথ্য দেয়। যদিও ঋণগ্রহীতারা বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর সংক্রান্ত গণনা হাতে লিখেও করতে পারেন, কিন্তু কাজটি সময়সাপেক্ষ এবং একই সঙ্গে সেখানে ভুলত্রুটির সম্ভাবনাও থেকে যায়। কিন্তু একটি বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর তাৎক্ষণিক ফলাফল দেয় এবং ঋণগ্রহীতাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- বকেয়া গৃহ ঋণ স্থানান্তর ক্যালকুলেটর সঠিক এবং নিরাপদ।
উপসংহার
যোগ্য বেতনভোগী এবং পেশাদার ঋণগ্রহীতাদের জন্য গৃহ ঋণের সুদের হার বার্ষিক মাত্র 8.60%* থেকে শুরু হয় এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা কমানোর জন্য ঋণগ্রহীতারা 30 বছর পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদ বেছে নিতে পারেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে কেউ এমনকী 5 কোটি টাকা পর্যন্তও ঋণ পেতে পারেন এবং নথি জমা দেওয়ার 48 ঘন্টার মধ্যেই ঋণের টাকা পাওয়া সম্ভব।
*নিয়ম ও শর্তাবলী প্রযোজ্য।
(ডিসক্লেইমার : এই প্রতিবেদনটি একটি পেইড ফিচার।ABP অথবা ABP LIVE এখানে প্রকাশিত মতামতকে সমর্থন/সাবস্ক্রাইব করে না। উল্লিখিত অনুচ্ছেদে বর্ণিত সব কিছুর জন্য অথবা বিবৃত/বৈশিষ্ট্যযুক্ত মতামত, ঘোষণা, নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আমরা কোনওভাবেই দায়বদ্ধ থাকব না। সেই কারণে দর্শকের এই বিষয়ে বিবেচনার কঠোরভাবে পরামর্শ দেওয়া হল।)