নয়াদিল্লি: পঞ্জাব ব্যাঙ্ক দুর্নীতি মামলায় ক্ষমা মঞ্জুর হল নীরব মোদির ভগ্নিপতির। ১৩ হাজার কোটির বেশি টাকার দুর্নীতি ও জালিয়াতি মামলায় শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা মঞ্জুর হল মায়াঙ্ক মেহতার। বিশেষ CBI আদালতের বিচারক এভি গুজরাতি তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। দুর্নীতি সম্পর্কে যা জানেন, সমস্ত তথ্য মায়াঙ্ককে জানাতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে আদালত। মায়াঙ্ক ভারতে নেই। বিদেশ থেকে তিনি যে ক্ষমার আর্জি জানান, তা মঞ্জুর হয়েছে। (PNB Scam Case)
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মায়াঙ্ককে ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছে বিশেষ CBI আদালত। অর্থাৎ সরকারি সাক্ষীর ভূমিকা পালন করবেন তিনি। দুর্নীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে হবে তাঁকে, দুর্নীতিতে যুক্ত সকলের ভূমিকা জানাতে হবে। (Nirav Modi PNB Scam)
মায়াঙ্ক আদতে ব্রিটেনের নাগরিক। গত ৩৫ বছর ধরে হংকংয়ের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতাপণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং দুর্নীতিদমন আইনে মামলা দায়ের করেছিল CBI. আদালতে মায়াঙ্ক জানান, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় ইতিমধ্যেই একটি ক্ষমার আর্জি মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিজে থেকেই ভারতে আসেন তিনি, আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেন নিজেকে। (Maiank Mehta)
মায়াঙ্কের আইনজীবী অমিত দেসাই এবং মানবেন্দ্র মিশ্র জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে নীরবের বিরুদ্ধে একটি মামলায় আগেই তাঁদের মক্কেলকে ক্ষমা করে দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED). মায়াঙ্ক এবং তাঁর স্ত্রী, নীরবের বোন পুরবী মেহতাকে ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যাতে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন তাঁরা। সেই সময় লন্ডনের ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্ট থেকে ED-র কাছে ১৭.৫ কোটি টাকা জমা করেন পূরবী। মায়াঙ্কের ক্ষমার আর্জির বিরোধিতা করেননি সরকারি কৌঁসুলি অরবিন্দ আঘবও।
১৩ হাজার কোটির বেশি টাকার পঞ্জাব ব্যাঙ্ক দুর্নীতি মামলার মূল অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ী নীরব এবং তাঁর মামা মেহুল চোকসি। CBI এবং ED সেই মামলার তদন্ত করছে। জাল Letter of Undertaking ইস্যু করে পঞ্জাব ব্যাঙ্ক থেকে সাধারণ মানুষের ১৩ হাজার কোটির বেশি টাকা তাঁরা বিদেশে পাচার করে দেন বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের একাংশের সাহায্যেই এই বিরাট দুর্নীতি সফল হয় বলে জানা যায়। বেলজিয়ামের আদালতে মেহুলকে প্রত্যর্পণের মামলা জলছে। নীরব লন্ডনের জেলে রয়েছেন।
ওই মামলায় নীরবের বোন পূরবীর নামও উঠে আসে, যিনি আবার বেলজিয়ামের নাগরিক। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে CBI জানিয়েছিল, পূরবী এবং হংকংয়ে Firestar Diamonds-এর অপারেশন্স বিভাগের প্রধান আদিত্য নানাবতী কোটি কোটি টাকা সরানোয় যুক্ত ছিলেন। মোট ১২০১.১৮ কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেছিলেন পূরবী। দুবাই এবং হংকংয়ে হিরের ব্য়বসা সামলাতেন পূরবী। পূরবীর স্বামী মায়াঙ্কের নামও জড়ায় এই দুর্নীতিতে। মায়াঙ্ককে নীরবের সহযোগী, সহ-ষড়যন্ত্রী বলে উল্লেখ করেছিলেন গোয়েন্দারা। তিনিও কোটি কোটি টাকা পাচারে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায় সেই সময়। মায়াঙ্ক সাধারণ কেউ নন, তাঁর দিদি মোনা মেহতা, যাঁর মেয়ে শ্লোকা মেহলা মুকেশ আম্বানির পুত্রবধূ। অর্থাৎ শ্লোকার নিজের মামা মায়াঙ্ক।