নয়াদিল্লি: প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম। পেট্রোল (Petrol)-ডিজেলের খরচা লাগামছাড়া হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে ইলেকট্রিক ভেহিকলের (Electric Vehicle) বা EV-এর।  কিন্তু ভারতে এর চাহিদা যতই বাড়ুক, জোগান সেই অর্থে নেই। সামান্য কিছু মডেলই বাজারে রয়েছে। EV-এর বাজারে আগেই পা রেখেছে গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা MG Motor, তারা তাদের ZS মডেল আগেই এনেছিল। এবার তারা বাজারে আনল ZS মডেলের আরও উন্নত ভার্সন বা Facelift. যেখানে যোগ হয়েছে একাধিক ফিচার এবং বেড়েছে ব্যাটারির আয়তনও। EV-কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয় ব্যাটারি ব্যাকআপ-এর বিষয়টি। এই মডেলে সেই বিষয়েও নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকছে।


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
বাদবাকি ফিচারের বিষয়ে পরে আসা যাবে। আগে দেখে নেওয়া যাক কোন দুটি বিষয়ের জন্য ZS মডেল বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত এর রেঞ্জ (Range) অর্থাৎ ব্যাটারি একবার ফুলচার্জে কতটা পথ পাড়ি দেবে এবং এর পারফরম্য়ান্স (Performance). দ্রুত এবং আরামে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে EV-এর জুড়ি নেই। কিন্তু ব্য়াটারি নিয়েই থাকে যাবতীয় চিন্তা। MG-এর আগের ZS মডেলেও ব্যাটারির দিকে খেয়াল রাখা হয়েছিল। সেই মডেলের ক্ষেত্রে সংস্থার তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল একবার চার্জ দিলে ৪১৯ কিলোমিটার দৌড়বে গাড়ি। সংস্থার দাবি  ZS Facelift-মডেলে রেঞ্জ হবে ৪৬১ কিলোমিটার। এই ভার্সনে আয়তনে বেড়েছে গাড়ির ব্যাটারি, রয়েছে 50.3 kwh ব্যাটারি প্যাক।




কত রেঞ্জ:
শহরের মধ্যে এবং হাইওয়েতে (Highway) ZS চালিয়ে দেখেছি আমরা। আরও একাধিক মোডের অপশন রয়েছে কিন্তু সবচেয়ে বেশি কতটা রেঞ্জ আসে তা দেখতে eco-মোডে চালানো হয়েছে গাড়িটি। প্রবল যানজটে থাকা রাস্তাতেও গাড়ি চালানো হয়েছে। এর পর আমরা মোটামুটি ৩৭০ থেকে ৩৮০ কিলোমিটারের রেঞ্জ (Range) পেয়েছি। যদিও ড্রাইভিং কন্ডিশন, রাস্তার অবস্থা, আবহাওয়া (Weather), গাড়ির যাত্রী সংখ্যা এবং মোডের (mode) উপর রেঞ্জ নির্ভর করে। তবুও আমরা বলতে পারি আগের ভার্সনের চেয়ে নতুন ভার্সনে রেঞ্জ অনেকটাই বেশি পাওয়া যাবে। তবে sports মোডের ক্ষেত্রে কমে যাবে রেঞ্জ। নেমে আসবে ২০০ কিলোমিটারের মত। তবে সাধারণ ভাবে খুব খারাপ পরিস্থিতিতেও ৩২০ কিলোমিটার এবং eco মোডে ৩৪০ কিলোমিটার রেঞ্জ মিলবে MG ZS facelift-এ। 


ইঞ্জিন এবং মোড:
নতুন ZS মডেলে রয়েছে 176bhp, যা আগের মডেলের চেয়ে বেশি। রয়েছে তিনটি আলাদা আলাদা mode. তার মধ্যে শহরের রাস্তায় যানজটে গাড়ি চালানোর জন্য সবচেয়ে ভাল eco mode. নিজের পছন্দমতো brake regeneration level বদলানোর সুযোগ রয়েছে। যেকোনও EV-এর মতোই এর acceleration-ও খুব ভাল, sports mode-এ যা আরও ভাল বোঝা যাবে। ফলে খুব দ্রুত গাড়ির গতিবেগ তিন সংখ্যায় পৌঁছে যেতে পারে। আবার ধীরগতিতে গাড়ি চালানোর জন্য উপযুক্ত। বেশি গতিবেগে গাড়ির কন্ট্রোল ভাল থাকে, body roll তুলনায় কম হয়। রাস্তায় গর্ত থাকলেও সেসব ভালই সামলে দিতে পেরেছে MG ZS facelift.     


অন্দরসজ্জায় নজর:
গাড়িটির অন্দরসজ্জায় নজর দিয়েছে সংস্থা। এই দামের সেগমেন্টের মধ্য়ে interior-এর দিক থেকে এই মডেল প্রথম দিকে থাকবে। contrast stitching, soft touch materials অত্যন্ত উচ্চমানের। নতুন ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারও (Instrument Cluster) অত্যন্ত ভালমানের নতুন মডেলে রয়েছে ১০.১ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন (Touchscreen)। EV-সংক্রান্ত একাধিক তথ্য দেখা যাবে সেখানে, যার ফলে গাড়ি চালাতেও নানা সুবিধে হবে। গাড়ির ভিতরে জায়গাও পর্যাপ্ত। চার আসনের গাড়িটির পিছনের আসনের যাত্রীদের জন্যও পা রাখার পর্যাপ্ত জায়গা (legroom) রয়েছে।   




ভরপুর ফিচার:
MG-এর যেকোনও গাড়ির মতোই এটাতেও একাধিক আধুনিক ফিচার রয়েছে। ZS-এর নতুন মডেলে রয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, প্যানোরামিক সানরুফ (panoramic sunroof), পিছনের আসনে রয়েছে আর্মরেস্ট (rear armrest)। রয়েছে  গাড়ি সংক্রান্ত একাধিক আধুনিক ফিচার। গাড়ির চাবি হারিয়ে গেলে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য রয়েছে ডিজিটাল ব্লুটুথ  কি (digital Bluetooth key), রয়েছে  blind spot detection, rear drive assist, wireless charging। সুরক্ষার দিকেও খেলায় রেখেছে সংস্থা। এই মডেলে রয়েছে ৬টি এয়ারব্যাগ (Airbag)। গাড়ির ভিতরে বাতাসের মান ঠিক রাখার জন্য রয়েছে বিশেষ প্রযুক্তি এয়ার ফিল্টার (PM 2.5 Air filter)।


দারুণ ডিজাইন:
নতুন ZS মডেলে রয়েছে স্লিম এলইডি হেডল্যাম্প (LED Headlamps), রঙিন  grille এবং নতুন বাম্পার থাকায় নজর কাড়তে বাধ্য গাড়িটি। চাকাও অনেকটাই বড়। নতুন ZS মডেলে রয়েছে ১৭ ইঞ্চির অ্য়ালয় হুইল (Alloys wheel)। টেইল ল্যাম্প (Tail Lamp) এলইডির।


চার্জ কীভাবে:
আগের মডেলের থেকে নতুন মডেলে চার্জিং এর জায়গা বদল হয়েছে। আগে লোগোর জায়গায় ছিল। এখন পাশে চার্জিং পয়েন্ট হয়েছে। MG পোর্টেবল চার্জার (Portable charger) দিচ্ছে। তার সঙ্গেই fast AC charger দিচ্ছে। যেটা   fast DC charging-এর সঙ্গেও মানানসই। ঘরেই ৯ ঘণ্টায় পুরো ব্যাটারি চার্জ হতে পারে। 


কত দাম:
এক্স-শোরুম প্রাইস ২৫.৮ লক্ষ টাকা। MG ZS-মডেল ৫০ লক্ষ টাকা দামের নীচে একমাত্র EV যা এত ভাল রেঞ্জ দেয়। যা দাম এবং যা  ফিচার তাতে এখনই এই মডেলের কোনও প্রতিযোগী বাজারে নেই। বরং তেলের ঊর্ধ্বগামী দামের দিকে তাকিয়ে MG ZS facelift ক্রেতাদের পছন্দের তালিকাতেই থাকবে।


আরও পড়ুন: আরও দামি হচ্ছে জীবনযাত্রা, দাম বাড়ছে বৈদ্যুতিন সামগ্রীরও, তালিকায় কী কী জেনে নিন