নয়াদিল্লি: সোশ্যাল মিডিয়ায় কী রাখা যাবে, কী সরাতে হবে, সেই নিয়ে ইলন মাস্কের X-এর সঙ্গে আইনি লড়াই চলছিল। এবার তথ্য়-প্রযুক্তি আইনেই বড় রদবদল ঘটাল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ‘বেআইনি কনটেন্ট’ নিয়ে কী করণীয়, কে বা কারা সেগুলি সরানোর নির্দেশ দিতে পারেন, সেই সংক্রান্ত বিধি-নিয়ম আরও কড়া হল। (IT Rules Amended)

Continues below advertisement

তথ্য-প্রযুক্তি আইন সংশোধন নিয়ে বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র। সংশোধিত আইন আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৩ (১) (ডি) ধারাটি বদলে দেওয়া হয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি কী ভাবে ‘বেআইনি কনটেন্ট’ সরাবে বা ‘ডিসেবল’ করবে তা নিয়ে আনা হল নয়া বিধিনিয়ম। (Content Takedown Rules Amended)

আগের আইনে বলা ছিল, সরকারের সংশ্লিষ্ট যে কোনও বিভাগ বা সংস্থা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে কোনও কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে পারে। নয়া আইনে বলা হয়েছে, সোশ্য়াল মিডিয়ায় কোনও কনটেন্ট সরানো বা ব্লক করার জন্য বিচারবিভাগ অথবা যুগ্মসচিব বা ডিরেক্টর পদমর্যাদার কেউই নির্দেশ দিতে পারেন।

Continues below advertisement

পুলিশের তরফে যদি কোনও কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল (DIG) পদমর্যাদার কোনও আধিকারিককে নোটিস পাঠাতে হবে। কেন ওই কনটেন্ট সরাতে বলা হচ্ছে, সেই কারণ লিখিত ভাবে জানানোও জরুরি।  এই ধরনের নোটিস পাওয়ার পর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ করতে হবে। কত কনটেন্ট সরাতে বলা হয়েছে, কী সরাতে বলা হয়েছে, মাসে একবার তা পর্যালোচনা করে দেখবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিক। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ (৩) (বি) ধারার আওতায় ওই কন্টেন্ট সরানোর প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন যদিও বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। তাদের দাবি, সংশোধিত বিধিনিয়মের মাধ্যমে সুরক্ষা প্রদান করা হচ্ছে না। বরং অস্বচ্ছতা তৈরি করছে, আইনি সুরক্ষাগুলিকে আরও দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। ওই সংস্থার দাবি, বিভিন্ন সরকারি বিভাগের আধিকারিকদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে যে তাঁরা সরাসরি কোনও কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে পারেন। 

আইনের এই সংশোধনকে ‘সেন্সরশিপের প্রাথমিক হাতিয়ার’ বলেও উল্লেখ করছে ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। তাদের মতে, আদালতে শুনানি, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে পর্যালোচনার ধারেকাছে না গিয়ে, দ্রুত এবং সহজে কাজ সারতেই এই সংশোধন ঘটানো হয়েছে। এতে কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ আসবে দেদার। কনটেন্ট সরানোর সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে পর্যালোচনার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তার কার্যকারিতা হ্রাস পাবে।

ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন আরও জানিয়েছে, আধিকারিকরা দেদার কন্টেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে শুরু করলে, মানুষের বাক্ স্বাধীনতা খর্ব হবে। সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণ না করে, সংসদে বিষয়টি উত্থাপন না করে, সরাসরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আইন কার্যকর করার যে ঘোষণা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাদের মতে, ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আইন ও নীতি সংক্রান্ত যে নীতি গ্রহণ করে, তার আওতায় খসড়া নীতিনিয়ম অন্তত ৩০ দিন আগে প্রকাশ করতে হয়। দিতে হয় ব্যাখ্য়াও।

মাইক্রোব্লগিং সাইট X-এর সঙ্গে একটি মামলাকে ঘিরেই এই বিতর্কের সূচনা। কর্নাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে X জানায়, কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারগুলি দেদার কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিচ্ছে তাদের। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলিকে নিয়ে গঠিত Digipub নামের একটি সংগঠনও আদালতের দ্বারস্থ হয়। উপযুক্ত কার্যকারণ ছাড়াই কনটেন্ট সরাতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারা। কর্নাটক হাইকোর্ট X-এর আবেদন খারিজ করে জানিয়েছিল, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া যায় না। হাইকোর্টের সেই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছে X. তার আগেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সংশোধন ঘটাল কেন্দ্র।