নয়াদিল্লি: আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ LLC, নেথান অ্যান্ডারসন এবং মরিশাসের ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টর মার্ক কিংডনকে শোকজ নোটিস ধরাল ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI. লেনদেন সংক্রান্ত নীতি লঙ্ঘন নিয়ে তাঁদের নোটিস ধরানো হয়েছে, যা থেকে পরবর্তীতে আদানিদের বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি, আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠে আসে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে। SEBI-র নোটিসের পাল্টা মুখ খুলেছে হিন্ডেনবার্গও, তাতে Kotak Mahindra Bank এবং তার প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাকের নামও টেনেছে তারা। (SEBI-Hindenburg Tussle)


SEBI-র অভিযোগ, হিন্ডেনবার্গ এবং অ্যান্ডারসন লেনদেন সংক্রান্ত বিধিনিয়ম, জালিয়াতি প্রতিরোধ আইন, লেনদেনে অনিয়ম প্রতিরোধী নিয়ম এবং গবেষণা সংক্রান্ত কাজে আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছে। পাশাপাশি FPI কিংডন বাজার নিয়ন্ত্রক আইন, জালিয়াতি আইন, আচরণবিধি এবং অনিয়ম প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ। (Adani Group)


SEBI-র দাবি, ভারতের বাইরে থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলি মূল্যয়ন করে দেখাই তাদের লক্ষ্য় ছিল বলে দাবি করেছিল হিন্ডেনবার্গ এবং FBI সংস্থাগুলি। আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা। বাস্তবে ভারতের শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিল ওই রিপোর্টের। SEBI-র দাবি, কিংডনের  হিন্ডেনবার্গকে শর্ট সেলার সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মেলাতে সহযোগিতা করে এবং পরোক্ষ ভাবে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায় যুক্ত হয়ে বিপুল টাকা লাভ করে, যার ভাগ পায় হিন্ডেনবার্গও। 


আরও পড়ুন: IPO Listing : ১৪ শতাংশ প্রিমিয়ামে লিস্টিং হয়েও ধস নামল এই শেয়ারে, হোল্ড না সেল করবেন ?


গত ২৬ জুন হিন্ডেনবার্গকে নোটিস ধরায় SEBI. ২১ দিনের মধ্যে হিন্ডেনবার্গের কাছ থেকে জবাবও চাওয়া হয়েছে। SEBI-র পাঠানো নোটিস নিজেদের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই আপলোড করেছে হিন্ডেনবার্গ। তাদের দাবি, রিপোর্টে কোনও ভুল ছিল না। এখনও পর্যন্ত যত রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, আদানি-রিপোর্ট নিয়েই সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করে তারা। হিন্ডেনবার্গের দাবি, আদানি গোষ্ঠী এবং দেশের আর এক সংস্থাকে বাঁচাতেই SEBI এই শোকজ নোটিস পাঠিয়েছে। SEBI-র শোকজ-কে 'অর্থহীন' বলেও উল্লেখ করেছে হিন্ডেনবার্গ। বরং আদানিদের পাশাপাশি Kotak Mahindra Bank-কেও SEBI বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে দাবি তাদের।


হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, বিদেশে বিনিয়োগ সংস্থা খুলে ভারতের বাজারে বিনিয়োগ করার বিষয়টি Kotak Mahindra Bank এবং সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাক-ই দেখভাল করছিলেন। তাঁদের ওই সংস্থার মাধ্যমেই বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে আদানিদের শেয়ারের দর বাড়ানো হয়। হিন্ডেনবার্গের দাবি, Kotak Mahindra Bank-এর প্রতিষ্ঠাতা উদয় ২০১৭ সালে SEBI-র কর্পোরেট গভর্নেন্স বিভাগের নেতৃত্বে ছিলেন। তাই কৌশলে উদয় এবং তাঁর সংস্থার নাম SEBI উহ্য রেখেছে, শুধুমাত্র K-India বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে। দুর্নীতি এবং কারচুপির সঙ্গে যেহেতু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম জড়িয়েছে, তাই তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ। রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলি আর্থিক নয়ছয়ে যুক্ত। বলা হয়, হিসেবে গরমিল থেকে আমদানির খরচে হেরফের ঘটিয়ে বেশি টাকা আদায় করা হয় সরকারের থেকে।  ঘুরপথে নিজেদের টাকাতেই নিজেদের সংস্থার শেয়ার- লেনদেন করে আদানি গোষ্ঠী কৃত্রিম ভাবে বাজারে নিজেদের শেয়ার দর বেশি দেখায় বলেও অভিযোগ করা হয়। ওই রিপোর্ট ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। আদানিদের শেয়ারে ধস নামে। বিশ্বের প্রথম ২০ জন বিত্তশালীর তালিকা থেকে ছিটকে যান আদানি। সেই সময় ভারতকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেন আদানি। যদিও বার বার আদানিদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সেই নিয়েই এবার হিন্ডেনবার্গকে নোটিস ধরাল SEBI.