নয়াদিল্লি: এতদিন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বড়াই করতেন। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতের উপর বেজায় রুষ্ট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্যই নাকি ভারতের উপর চটেছেন তিনি। ২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে জরিমানা চাপানোর ঘোষণা আগেই করেছেন। মঙ্গলবার ফের বাড়তি শুল্ক টাপানোর ঘোষণা করেছেন তিনি। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে ভারত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর এত অসন্তুষ্ট হলেন কেন ট্রাম্প? ভারতের প্রতি তাঁর এত কড়া মনোভাবের আসল কারণ কী? (US-India Relations)

রাশিয়ার থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কেনে ভারতই। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে, ভারতকে অশোধিত তেলের উপর বিপুল ছাড়ও দেয় রাশিয়া। ভারতকে তেল বিক্রির সেই টাকাতেই রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। কিন্তু কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার তৈল সংস্থাগুলির স্বার্থরক্ষার্থেই ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন ট্রাম্প। জ্বালানি ক্ষেত্রেও আমেরিকার আধিপত্য স্থাপন করতে আগ্রহী তিনি। (Donald Trump)

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীনও রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন, গত ছ’মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে রোজ ১.৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল করে তেল কিনেছে ভারত। এই মুহূর্তে ভারতের বাজারে ৩৬ থেকে ৪০ শতাংশ তেলের চাহিদার জোগান একা রাশিয়াই মেটায়। বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে ভারতকে তেলের দামে ছাড়ও দেয় রাশিয়া। ফলে দুই দেশই লাভবান হয়। একসময় রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে ভারতকে উৎসাহ জুগিয়েছিল আমেরিকাও। খুব বেশি দিন আগে নয়, ২০২২-’২৩ সাল নাগাদই। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে, তার জন্য ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যে কোনও আপত্তি করেনি তারা।

কিন্তু আমেরিকার মসনদে দ্বিতীয় বার ট্রাম্প আসীন হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টেছে। দ্বিতীয়বার তাঁকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট করতে প্রচারে টাকা ঢেলেছিল আমেরিকার তাবড় তৈল সংস্থা, জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থা। তাদের আশা ছিল, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন দেশে আমেরিকা থেকে জ্বালানি রফতানি বাড়বে।  সম্প্রতি তৈল ও গ্যাস উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকিও ঘোষণা করেছেন ট্রম্প। পাশাপাশি, গত ছ’মাসে আমেরিকা থেকে ভারতে জ্বালানির সরবরাহও ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ৮ শতাংশ জ্বালানি আমেরিকা থেকে আসে। কিন্তু যতটা ভাবা হয়েছিল, ততটা বাড়েনি লেনদেন। ফলে ট্রাম্পের প্রচারে যে সব সংস্থা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল, আশানুরূপ মুনাফা হচ্ছে না তাদের। রাশিয়ার থেকে ভারতের তেল কেনা বন্ধ করে, ট্রাম্প তাই নিজের দেশের সংস্থাগুলির স্বার্থরক্ষা করতে তৎপর বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। 

আর তাই চড়া শুল্ক চাপিয়ে ভারতকে ট্রাম্প জব্দ করতে চাইছেন বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, ভারত বিদেশে যত পণ্য রফতানি করে, তার এক পঞ্চমাংশ ঢোকে আমেরিকার বাজারে। জামাকাপড়, ওষুধপত্র, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিন সামগ্রী রয়েছে সেই তালিকায়। সেই সব পণ্যের উপর চড়া শুল্ক চাপলে ভারতের তাবড় সংস্থা, ছোট ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ভারতকে বশে আনতে চাইছেন ট্রাম্প। তবে ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করার কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।