হিন্দোল দে, কলকাতা: অভিনব কায়দায় চুরির ঘটনা ঘটলো বেলেঘাটা থানার সুরেন সরকার রোডে। গ্রেফতার হয়েছে ঘটনায় অভিযুক্ত বাড়ির বড় জামাই পার্থ সারথি ঘোষ। ২১ জানুয়ারি গোবিন্দ চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এই মর্মে যে ১৭ তারিখ তাঁর ছেলে অভিজিত দাসের সঙ্গে ডলি দাসের বিয়ে হয়। এই বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রায় ৮ লক্ষ টাকার সোনার গয়না তারা একটি আলমারিতে রেখেছিলেন। বিয়ের ৩ দিন পর অর্থাৎ ২০ তারিখ আলমারি খুলে দেখতে পান যে আলমারি থেকে সমস্ত সোনার গয়না চুরি হয়ে গিয়েছে। তৎক্ষণাৎ দাস পরিবারের প্রধান গোবিন্দ চন্দ্র দাস বেলেঘাটা থানার দ্বারস্থ হন।


পুলিশ পরিবারকে জানায় আগে ভালো করে খুঁজে দেখতে যে সোনার গয়না তাঁরা অন্য কোথাও রেখেছেন কী না। পরবর্তী ক্ষেত্রে ২১ তারিখ, পরিবারের সদস্যরা আবার থানায় আসেন এবং জানান তারা সেই গয়না কোথাও খুঁজে পাননি । অভিজিৎ দাসের বাবা গোবিন্দ চন্দ্র দাস একটি লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেলেঘাটা থানার তদন্তকারী দল তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু করেন। তদন্তের প্রথম পর্যায়ে পরিবারের সকল সদস্যদেরকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানতে চায় পরিবারের কোন কোন সদস্য ছিলেন। এরই মাঝে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানান সেই সময়ে তাদের বড় জামাই পার্থসারথী ঘোষ তিনিও সেই বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু গত ১৯ তারিখ রাতে তিনি অভিজিৎ দাসের পরিবারকে জানায় তার শরীর খারাপ লাগছিল । তাই তিনি ২০ তারিখ সকালেই বেহালা থানার অন্তর্গত রায়বাহাদুর রোডের নিজের বাড়িতে ফিরে যান। এমনকী, ২০ তারিখ ফোন করে বড় জামাইকে চুরির বিষয়টি জানান দাস পরিবারের সদস্যরা। দাস পরিবারের সদস্যদের থেকে এই বিষয়ে জানার পর পুলিশ বড় জামাই পার্থসারথী ঘোষকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করেন । এক সময় পুলিশি জেরায় পার্থসারথী ঘোষ ভেঙে পড়েন এবং তিনি পুলিশকে জানান অভিজিৎ দাস ও ডলি দাসের বিয়েতে তারা যে সোনার গয়না পেয়েছিলেন সেই সোনার গয়না চুরি করার জন্য তিনি ১৯ তারিখ রাতে তার শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সদস্যদেরকে বলেন যে তিনি পরোটা এবং তরকারি খাবেন । সেই অনুযায়ী শ্বশুরবাড়ি সদস্যরা যখন পরোটা এবং তরকারি তৈরি করেন রাতের খাবারের জন্য। সেই আলুর তরকারির মধ্যে ঘুমের ওষুধ গুঁড়ো করে পার্থসারথী ঘোষ মিশিয়ে দিয়ে সকল সদস্যকে খাওয়ান ।


সকলে রাতের খাবার খেলেও সেই সময় তিনি জানান তার শরীর খুব খারাপ লাগছে তাই তিনি রাতে কিছু খাবেন না। এরপরই দাস পরিবারের সকল সদস্য যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সেই সুযোগে পেশায় হর্টিকালচার ব্যবসায়ী পার্থসারথী ঘোষ আলমারি খুলে সমস্ত গয়না নিয়ে তার নিজের লাগেজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে এবং ২০ তারিখ দিনের আলো ফুটতেই তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে চম্পট দেন। গোটা বিষয়টি পুলিশ জানার পর তৎক্ষণাৎ অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে ৷ তাকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন চুরি যাওয়া ৮ লক্ষ টাকার সোনার গয়না পার্থসারথি তার রায়বাহাদুর রোডের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছেন। এরপরই বেলেঘাটা থানার পুলিশ বেহালা থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত চুরি যাওয়া গয়না উদ্ধার করেন। বড় জামাইয়ের এই সোনা চুরির ঘটনায় স্তম্ভিত দাস পরিবারের সদস্যরা।