আবির দত্ত, কোকরাঝাড়, অসম : বাংলাদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত আনসারুল্লা বাংলা টিমের দুই জঙ্গির। মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল আব্বাস আলি এবং মিনারুল শেখ নামের দুই সন্দেহভাজনকে। এই দু'জনের বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গিয়েছে। সেখানে গিয়ে, আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তাদের। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে অসম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। 


খাগড়াগড়কাণ্ডে বিস্ফোরণে ধৃত জামাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গি তারিকুল ইসলামের সঙ্গে জেলে আলাপ হয় আব্বাসের। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গির কাছ থেকে জেলেই পাঠ নেওয়া শুরু হয় তার। জেলমুক্তির পর শাদ রাডিকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকবার তারিকুলের সঙ্গে দেখাও করে আব্বাস, দাবি অসম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের। 


এইসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর প্রশ্ন উঠছে তাহলে বাংলা থেকে মাত্র ৫১ কিলোমিটার দূরে অসমের কোকরাঝাড়ে ঘাঁটি গেড়ে কি বড়সড় নাশকতার ছক কষছিল আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্যরা? নদীর চরকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আইইডি- র ব্যবহার, আগ্নেয়াস্ত্র চালানো এখানেই জঙ্গিদের শেখানো হতো বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। অসম পুলিশের এসটিএফ- এর অপারেশন প্রঘাতে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে ১২ সন্দেহভাজন। কেরল থেকে ১ জন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২ জন এবং অসম থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 


অসমের মাটিতে বসে বাংলার ঘাড়ে নিঃশ্বাস আনসারুল্লা বাংলা টিমের 


পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল একটি ক্যাম্প। এখান থেকে উদ্ধার হয়েছে একের পর এক আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, আইইডি তৈরির সরঞ্জাম। অসমের জয়পুর নামাপাড়া অঞ্চলে মিলেছে একটি ঘর, যা কিছুদিন আগেই তৈরি হয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। বাঁশের চাল রয়েছে এই ঘরে। রয়েছে বাঁশের কাঠামো। এই ঘরে রয়েছে ফাঁকা জায়গা, একটি খাট। এখান থেকেই প্রচুর গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এই এলাকা থেকে আলিপুরদুয়ার মাত্র ৮৭ কিলোমিটার, তার কিছুটা দূরে কোচবিহার। 


অসমের এই জায়গাতেই কয়েক মাস ধরে চলছিল আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কাজ, চলছিল গুলি সংগ্রহের কাজ এবং অত্যাধুনিক আইইডি তৈরির কাজ, এমনটাই জানা গিয়েছে অসম পুলিশ সূত্রে। অসমের গৌরাঙ্গ নদীর চর থাকে ৬ মাসের জন্য। বাকি সময় অসমে কিংবা ভুটানে বৃষ্টপাত হলে নদী জলমগ্ন থাকে, চর দেখা যায় না। পুলিশ সূত্রে খবর, এই চর ব্যবহার করেই দিনের পর দিন চলেছে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ। কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে হবে, আইইডি- র বিভিন্ন ব্যবহার, গুলি কীভাবে সংগ্রহ করতে হবে, ফাঁকা গুলি, ভরা গুলি- এই সবকিছু সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নদীর চরকে কাজে লাগিয়ে হয়েছে বলে খবর অসম পুলিশ সূত্রে।