কলকাতা : তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএম - জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী 'INDIA' জোটের ৩ শরিক। তবে সিপিএমের ঘোষিত অবস্থান, বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলবে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে সিপিএমের সঙ্গে এরাজ্যে জোট বেঁধে লড়াই প্রশ্নে দলের অবস্থানের কথা জানালেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। "সিপিএমের সঙ্গে জোট নিয়ে বাংলায় কথা বলার কোনও প্রশ্ন আছে বলে আমাদের জানা নেই", বলে মন্তব্য করেন তিনি।


কুণাল বলেন, "একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে অবিজেপি। সেখানে অনেক দল, যারা বিভিন্ন রাজ্যে নানা অবস্থায় রয়েছে তাদের মূল নীতির ওপর দাঁড়িয়ে বসতে হয়। ওই বসা আর পশ্চিমবঙ্গের বাস্তব চিত্র, দু'টো সমান নয়। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল একাই একশো। তাছাড়াও, যদি জোট দরকার হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরা কংগ্রেসের বিষয়ে কথা বলছেন।  সিপিএমের সঙ্গে জোট নিয়ে বাংলায় কথা বলার কোনও প্রশ্ন আছে বলে আমাদের জানা নেই।"


তাঁর এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, "তৃণমূলের কফিনে শেষ পেরেক দেওয়ার জন্য কুণালের হাতুড়ি যথেষ্ট। তার জন্য আমার আর লাগবে না।"


তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে, বুধবার চাঞ্চল্যকর দাবি করেন, মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তিনি বলেন 'কাগজপত্রে যা দেখছি যে, চিফ মিনিস্টার পশ্চিম বাংলার, উনি দুটো সিট বহরমপুর ও দক্ষিণ মালদা দিয়েছেন আমাদের।' 


২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এরাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে দু'টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। মালদা দক্ষিণে জেতেন আবু হাসেম খান চৌধুরী। বহরমপুরে জয়ী হন অধীর চৌধুরী। এবারও এই আসন দু'টি তৃণমূলনেত্রী কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে দাবি করলেন মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ। তিনি বলেন, 'বলেছেন যে, দুটো আপনারা নেন। আমাদের আরও কিছু দাবি আছে। আমাদের দাবিগুলো তাদেরকে জানাচ্ছি বা জানানো হচ্ছে।'


সূত্রের দাবি, ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে ২টো আসন দিতে চাই। এর পরদিনই বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাহুল গান্ধী-সহ শীর্ষনেতারা। সূত্রের দাবি, সেখানে অধীর চৌধুরী বলেন, আমি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দয়ায় লড়তে চাই না। এই মুহুর্তে ৭টি লোকসভায় কংগ্রেস ভাল জায়গায় আছে। মুর্শিদাবাদের ৩টে, মালদার দু'টো, দার্জিলিং এবং রায়গঞ্জ। এই আসনগুলোতে ভাল জায়গায় আছে দল।


কিন্তু, এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই চাঞ্চল্য়কর দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী।


এপ্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী গতকাল বলেছিলেন, "অনেকবার অনেক কথা বলেছেন। ওদের সঙ্গে বহুবার কথা বলে ঠকেছেন। আবার বাইরে এসে বলেছেন, আমাকে ঠকিয়ে দিয়ে চলে গেল। বিশ্বাসঘাতকতা করল...ইত্যাদি ইত্যাদি। উনি যা বলছেন আমি তার কথার কোনও উত্তর দেব না। কিন্তু, যে কেউ এটা বিবেচনা করবেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংসদে কংগ্রেসের যে দুটো আসন, এই দুটোতেই কিন্তু যাঁরা জিতেছেন, সেখানে সিপিআই তার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস জিতেছে, বামেরা তার সঙ্গে ছিল।"


এপ্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, "সিপিএম চাইছে, কংগ্রেস যেন তৃণমূলের সঙ্গে জোটে না আসে। কারণ, সিপিএমের অস্তিত্বের লড়াই। সংকটটা বিজেপির, আর  সংকটটা সিপিএমের। এরাই জোট নিয়ে চিন্তায় আছে। বিজেপির আশঙ্কা হচ্ছে, ক্ষমতা থেকে চলে যাবে। আর সিপিএমের শঙ্কা হচ্ছে, দলটা উঠে যাবে।"