ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: ক্যানসার চিকিৎসা করতে গিয়ে চোখ থেকে গাদাখানেক পোকা বার করলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। একটি দুটি নয়, একসঙ্গে ৭০-৮০টি পোকা পাওয়া গেল রোগিনীর চোখে। অশীতিপর রোগিনীর চোখ থেকে পোকাগুলি ইথার ও ফরসেপের সাহায্যে বার করেন চিকিৎসকরা। পোকার সংখ্যা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে চিকিৎসক ও রোগিনীর পরিজনদের। দুই দিন ধরে মোট তিন বার ড্রেসিং করতে হয় সবকটি পোকা বার করতে। আপাতত রোগিনী এই পরজীবীর হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। 


কীভাবে জানা গেল ?


পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা অশীতিপর রোগিনী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন চোখের ক্যানসার নিয়ে। বেসাল সেল কারসিনোমায় (basal cell carcinoma) আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তবে ক্যানসারের এই টিউমারটি ধরা পড়েছিল দুই বছর আগে। এত দিনে সেটি বেড়ে যায়। তাতে পচন ধরে যায়। এমনকি রক্তক্ষরণও শুরু হয়। যে কারণে রোগিনী হাসপাতালে আসেন। পরে তাঁকে জরুরি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায়,  ওই টিউমারের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল ৭০-৮০ পোকা। 


কী হতে পারত রোগিনীর ?


কলকাতা মেডিকেল কলেজের (Kolkata Medical College) রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজির (RIO) অধিকর্তা অসীম ঘোষ বলেন, 'ক্যানসার চিকিৎসার জন্য এই পোকাগুলি বার করা বিশেষ জরুরি ছিল। নয়তো এর থেকে পরবর্তীকালে রোগীর চোখে অ্যালার্জি সংক্রমণ হতে পারত। যা থেকে রোগিনীর মৃত্যুও হতে পারত। প্রথম তিন বারের ড্রেসিংয়ে সবকটি পোকা বের করে ফেলা সম্ভব হয়।' পরের ধাপে পোকাগুলির অবশিষ্ট ডিমও বার করেন চিকিৎসকরা। এই সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়েছে রোগিনীকে।


 



রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজির (RIO) অধিকর্তা অসীম ঘোষ


কীভাবে বার করা হল পোকা ?


পোকাগুলি বের করার জন্য ইথার ব্যবহার করা হয়েছিল এই ক্ষেত্রে। ইথারের গন্ধেই বেশিরভাগ পোকা বেরিয়ে আসে। এর পাশাপাশি ফর্সেপ ব্যবহার করা হয়েছিল।  পোকা গুলো চোখের প্রথম স্তরের তলায় ঢুকে যায়। সেখান থেকে বের করতে এই পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। আপাতত রোগীর  চোখ পোকা থেকে একেবারেই মুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরপরে ক্যানসার আক্রান্ত অংশের অস্ত্রোপচার শুরু করা হবে। এখন তারই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।


আরও পড়ুন - চোখ আর জিভ দেখেন কেন ডাক্তাররা ? কী ‘লেখা’ থাকে এই দুই অঙ্গে ?