রাজা চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি:: প্রতিমা বিসর্জনের সময় হঠাৎই জলপাইগুড়ির মালবাজারের মাল নদীতে হড়পা বান। জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আরও অনেকে। আরও বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, মৃতদের মধ্যে ১০ বছরের এক বালিকা রয়েছে। গতকাল মাঝরাত পর্যন্ত চলে উদ্ধারকাজ। তারপর প্রবল বৃষ্টির জেরে উদ্ধারকাজ সাময়িক বন্ধ হয়। আজ সকালে নদীর বিভিন্ন অংশে চালানো হবে তল্লাশি। পুলিশ সূত্রে খবর, ৭০টি প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আনা হয়েছিল। তার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০টি প্রতিমা বিসর্জনের পরই বিপর্যয় ঘটে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, নদীখাতে আগেই বোল্ডার ফেলা হয়েছিল, যাতে যেদিকে বিসর্জন হবে, সেদিকে বেশি জল যায়। হড়পা বানের সময় তা হিতে বিপরীত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।  


দশমীর রাতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়! আচমকাই অসুরের রূপে ধেয়ে এল হড়পা বান। বিসর্জন দেখতে গিয়ে, ভেসে গেলেন বহু মানুষ। নিমেষের মধ্যে আনন্দ বদলে গেল হাহাকারে। জলপাইগুড়ির মাল নদীতে হড়পা বানে ভেসে গিয়ে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে এক শিশু-সহ ৮ জনের। 


 


মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বেশ কয়েকজন। আরও কেউ নিখোঁজ আছেন কি না, তাঁদের খোঁজে বৃহস্পতিবার সকালে ফের শুরু হয় উদ্ধারকাজ। NDRF-এর পাশাপাশি, খোঁজ চালাচ্ছে বেসরকারি সংস্থার র‍্যাফটররাও।


জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্তের কথায়, বহুবছর ধরে বিসর্জন, শেষ ২০ বছরে এরকম ঘটনা ঘটেনি। ভাসান শুরুর সময় হাঁটুর নীচে জল ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ বান আসে। কিছু লোক ভেসে যান। সেই সময় ঘাটে অন্তত ১ হাজার লোক ছিলেন। যারা ভেসে যান, স্পটেই ২০-২৫-জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৩ জন ভর্তি, বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৮ জন মারা গেছে, মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত নিখোঁজের অভিযোগ নেই।


জেলা প্রশাসনের কাছে কারও নিখোঁজের খবর নেই। তবে এদিন ১২ বছরের মেয়ের খোঁজে হাসপাতালে ছুটে বেরিয়েছেন এক বাবা। নেওড়ার এই বাসিন্দা জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধেয় তাঁর মেয়ে রুমিতাও গেছিল বিসর্জন দেখতে। কিন্তু, তারপর আর খোঁজ মিলছে না তার। এখনও কেউ নিখোঁজ থাকলে বা বিপর্যয় সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য জানার জন্য, রাজ্য সরকারের তরফে দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।


এদিকে বিসর্জনের সময় নদীর পাড়ে উপস্থিত ও মৃতদের পরিজনদের অভিযোগ, বিসর্জনের সময় নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়নি প্রশাসনের তরফে। যে কারণে ঠেকানো যায়নি এতগুলি মৃত্যু। এর প্রতিবাদেই এদিন মালবাজারের ক্যালটেক্স মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য তুলে ধরে, PMO-র তরফে ট্যুইটারে লেখা হয়েছে, 'দুর্গাপুজোর আনন্দোত্‍সবের মধ্যেই জলপাইগুড়ির দুর্ঘটনায় মর্মাহত। যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের সমবেদনা জানাই। মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে'। 


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ট্যুইট করে মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ করে আর্থিক সাহায্য করা হবে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।  এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক বুলুচিক বরাইক।


ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ জন বার্লা, মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গাও। আহতদের দেখতে হাসপাতালেও যান তাঁরা।