সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: শীত নেই। তার বদলে শীতের মরসুমে ক্রমশ থাবা বাড়াচ্ছে বায়ুদূষণ। শীতকালে কলকাতার বাতাসে দূষণের পরিমাণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পরিবেশবিদ এবং চিকিৎসকদের। গাড়ির ধোঁয়ার কারণে দূষণ এমনিতেই হচ্ছে। তার উপর বিপদ বাড়াচ্ছে নির্মাণশিল্প থেকে উৎপন্ন হওয়া ধূলিকণা। দূষণ বৃদ্ধির পিছনে বিহার-ওড়িশার মতো পড়শি রাজ্যের হাতও রয়েছে।


কোন তথ্যে হদিশ:
সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে বোস ইনস্টিটিউট, তাতেই উঠে এসেছে উদ্বেগের এই ছবি।


ডিসেম্বর প্রায় শেষ। কিন্তু এখনও কলকাতায় পড়েনি শীত। সোয়েটারও বিশেষ কাজে লাগছে না। কিন্তু ধোঁয়াশা ঢাকা কলকাতার ছবি দেখা যাচ্ছে রোজই। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় বাড়ছে অন্য রোগও। 


কী বলছে সমীক্ষা?
বোস ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতায় গাড়ি থেকে দূষণের পরিমাণ সামান্য কমেছে। ক্রমশই বাড়ছে নির্মাণজনিত দূষণ। গবেষকদের দাবি, প্রায় ৪০ শতাংশ দূষণের উৎস বাড়ি ভাঙা ও বাড়ি তৈরির কাজের সময় বাতাসে মিশে যাওয়া ধুলোকণা। পাশাপাশি পড়শি রাজ্যগুলো থেকেও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বাড়ছে বায়ুদূষণ। এই সমীক্ষা বলছে, কলকাতার দূষণের মাত্রা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বিহার, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলি থেকে এরাজ্যে ঢোকা দূষিত বাতাস।


বোস ইন্সটিটিউটের গবেষক অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, 'কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ পড়শি রাজ্যগুলো। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী শীতকালে বায়ুপ্রবাহ পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে এরাজ্যে আসে।'


বাতাসে দূষণের পরিমাণ কতটা তা দেখা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে,



  • এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা AQI  শূন্য থেকে ৫০ হলে, সেখানকার বাতাসের মান ভাল।  

  • AQI ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে হলে তা satisfactory বা সন্তোষজনক।

  • ১০১ থেকে ২০০ হলে তা মডারেট বা পরিমিত। 

  • AQI ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত থাকলে সেখানকার বাষুদূষণ poor বা খারাপ। 

  • এই বাতাসে বেশিক্ষণ থাকলে ফুসফুসের সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

  • ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে তা ভীষণই উদ্বেগের। এরকম জায়গায় বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস নিলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

  • আর AQI ৪০১- ৫০০ হলে তা সিভিয়ার, মারাত্মক উদ্বেগের। 


কেন এত উদ্বেগ:
উচ্চ রক্তচাপ ও অপুষ্টির কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি মৃত্যুর জন্য ধূমপানও একটি বড় কারণ। এই তিনটি বাদ দিলে বায়ুদূষণই এখন সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণেই এখনই বায়ুদূষণে লাগাম না পরাতে পারলে ভবিষ্যতে তা আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


আরও পড়ুন: দিল্লির সঙ্গে পাল্লা, ভীষণই উদ্বেগের কলকাতার বায়ু দূষণের মাত্রা ! আঁতকে ওঠা পরিসংখ্যান