রাজ্যজুড়ে শীতের আমেজ, জেলায় জেলায় নামছে পারদ। এই উৎসবের মরসুমে কাছেপিঠে কোথা ছুটি কাটাতে যাওয়ার কথা ভাবছেন? আচ্ছা, বাঁকুড়া গেলে কেমন হয়নদী, পাহাড়, প্রাণবন্ত সবুজে ঘেরা জঙ্গল, বিশ্ববিখ্যাত টেরাকোটাশিল্প ও লালমাটির গন্ধের টানে, দূরদূরান্ত থেকে এখানে ভিড় জমান পর্যটকরা। 


 


বাঁকুড়া : মধ্যযুগীয় পশ্চিমবঙ্গের মল্ল রাজত্বের কেন্দ্রভূমি বাঁকুড়া জেলা। প্রাচীন যুগে এই জেলা ছিল রাঢ় অঞ্চলের অধীনস্থ। এখানকার ঐতিহ্য, উজ্জ্বল স্থাপত্য মন কাড়ে আপামর বাঙালির।  যুগ  যুগ ধরে বাঁকুড়া জেলা রাজ্য-দেশ-বিদেশের একাধিক পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ। কী কী অন্যতম দর্শনীয় স্থান আছে বাঁকুড়ায় ? চলুন, দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।





মুকুটমণিপুর : মুকুটমণিপুরে গড়ে ওঠা বাঁধটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ। কুমারী ও কংসাবতী নদীর সঙ্গমস্থলে তৈরি হয় এই বাঁধ। বাংলার সেরা দশটি জনপ্রিয় পিকনিক গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে এই স্থানটি। নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন মুকুটমণিপুর। 





বিষ্ণুপুর: বিষ্ণুপুর মন্দিরনগরীর পরতে পরতে লুকিয়ে ইতিহাস। বঙ্গে পাথরের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে পোড়ামাটির ইটগুলি বিকল্প হিসাবে এসেছিল এবং বাংলা পায় টেরাকোটানামে এক নিখুঁত কারুকার্যের খোঁজ। এখানে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে একাধিক এমন স্থাপত্য যা পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি। সে যুগের শিল্পীরা তাঁদের হাতের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন বিষ্ণুপুরের নানা কাহিনি। রসমঞ্চ, জোড়বাংলা মন্দির, শ্যাম রায় মন্দির চোখ টানে পর্যটকদের। এখানকার বালুচরী শাড়ি খ্যাতি লাভ করেছে বিশ্বজুড়ে। 


 


শুশুনিয়া: যেদিকে তাকাবেন, সবুজ। সঙ্গে লালমাটির গন্ধ। বাঁকুড়া জেলার উত্তর-পশ্চিমে দাঁড়িয়ে ১৫০০ ফুট উঁচু শুশুনিয়া পাহাড়। পাহাড়ের গা দিয়ে বয়ে চলেছে গন্ধেশ্বরী নদী। ইতিহাস অনুসারে, এই পাহাড়ে রাজা চন্দ্রবর্মণের দুর্গ ছিল। পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম শিলালিপি এখানে অবস্থিত এখানে আপনি পাবেন রক ক্লাইম্বিং-এর সুযোগ। প্রকৃতির কোলে এক শান্তিপূর্ণ উইকএন্ড কাটানোর অন্যতম সেরা জায়গা বাঁকুড়ার এই শুশুনিয়া পাহাড়।


 


জয়রামবাটি: বৈকুণ্ঠ হতে লক্ষ্মী এলো পৃথিবীর এই মাটিতে, জয়রামবাটিতে। মা সারদার পুণ্য জন্মভূমি  জয়রামবাটি। মা-এর জন্মস্থানে রয়েছে মাতৃমন্দির। রয়েছে মা-এর শ্বেত পাথরের একটি মূর্তি। মন্দিরের ঠিক সামনেই রেলিং ঘেরা পুণ্যিপুকুর, যেটি ব্যবহার করতেন তিনি। মন্দির প্রাঙ্গণজুড়ে নিরিবিলি পরিবেশ শান্তি দেবে আপনার মনকে। থাকতে পারেন মাতৃমন্দিরের গেস্ট হাউসেই। মা-এর কাছে থাকার এই সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়





ঝিলিমিলি: ঝিলিমিলি, বাঁকুড়া জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। শহরের কোলাহল থেকে দূরেসারি সারি শাল, মহুয়া, শিমুলগাছ। কানে ভেসে আসবে পাখির গুঞ্জন ও বাউল গান। বসন্তে চারিপাশ ভরে ওঠে আগুনরঙা পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ায়। এখানে আদিবাসীদের সাধারণ জীবনযাপনও দেখার মত। ঝিলিমিলিতে যা আপনার মন কাড়তে বাধ্য, তা হল, গাছ বাড়ি অর্থাৎ ট্রি হাউস। 





বিহারীনাথ পাহাড়: সুদৃশ্য সবুজ, কুলকুল করে বয়ে চলেছে দামোদর। শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশের মাঝে দাঁড়িয়ে ১৪৪৯ ফুটের বিহারীনাথ পাহাড়। জল- জঙ্গল- পাহাড়ের এই মেলবন্ধন নিমেষে দূর করে দেবে আপনার ক্লান্তি । পাহাড়ের কাছেই রয়েছে বাবা বিহারীনাথের মন্দির। উপাসকদের মতে, ‘বিহারীনাথখ্যাত শিবলিঙ্গজাগ্রত। 


 


বাঁকুড়া কীভাবে পৌঁছবেন?


 


আকাশপথে- কলকাতা বিমানবন্দরে এসে, কলকাতা থেকে বাঁকুড়া যাওয়া যেতে পারে। 


 


রেলপথে-  পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বড় শহরগুলি থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার নিয়মিত ট্রেন পরিষেবা রয়েছে। 


 


সড়কপথে- কলকাতা থেকে বাঁকুড়া যেতে, পেয়ে যাবেন একাধিক বাসও। 


 


কোথায় থাকবেন?


 


 স্টেশন থেকে বেরিযেই একাধিক হোটেল, রিসর্ট নজরে পরবে। খাওয়া-দাওয়ারও সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।