কলকাতা : কখনও দুর্নীতির ‘মাথা’ খুঁজতে বলা! কখনও ‘ধেড়ে ইঁদুর বেরোনো’র ভবিষ্যদ্বাণী! কখনও আবার ‘ঢাকি সমেত বিসর্জনের’ হুঁশিয়ারি! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, বিভিন্ন সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ( Abhijit Gangopadhyay ) পর্যবেক্ষণ নতুন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেমন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,'দিদি একা সামলাতে পারছেন না। চারপাশে এত দুর্বৃত্ত থাকলে সামলাবেনই বা কি করে? '
' দুর্নীতির সমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি '
২৯ মার্চ, কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় CBI-এর ভূমিকায় কার্যত অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছিলেন, ' দুর্নীতির সমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি '
গত বছরের ডিসেম্বরে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ' প্রয়োজন হলে ২০১৬ সালের মোট ৪২ হাজার ৫০০ প্রাথমিক শিক্ষকের প্যানেল বাতিল করে দেব! বিসর্জন দিয়ে দেব ঢাকি সমেত। '
এর আগে গত বছরের ২৩ নভেম্বর, অযোগ্যদের পুনর্বহাল সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ' কার নির্দেশে অবৈধদের শূন্যপদে চাকরি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করল কমিশন? তা তদন্ত করে দেখবে CBI। এই আবেদনগুলির উৎস খুঁজে বের করবে CBI। কার মস্তিষ্কপ্রসূত? CBI-কে তাও খুঁজে বের করতে হবে। '
' মাথায় বন্দুক ঠেকালেও থামব না।'
এরপর গত পয়লা ডিসেম্বর, নবম-দশমে অবৈধভাবে সুপারিশপত্র প্রাপকদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া পর, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনকে বলেছিলেন, নির্ভয়ে কাজ করুন। অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরোবে। তাঁর এজলাসের বাইরে হৈ হট্টগোল নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'আমি দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও থামব না।'
মুর্শিদাবাদের এক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সেই মামলায় গত বছরের অগাস্টে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে টাকা না দিলে চাকরি মেলে না। গত বছরের ৩ নভেম্বর, নিয়োগ-দুর্নীতি প্রসঙ্গেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে আসল অপরাধী কে সবাই জানে। আমার জীবদ্দশায় তারা ধরা পড়বে বলে তো মনে হয় না।
' সিবিআই ম্যাজিক দেখাতে পারে '
৭ নভেম্বর, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বিচারপতি বলেছিলেন, ' সিবিআই ম্যাজিক দেখাতে পারে। আশা করব, তারা তা দেখাবে। ' এরপর গত মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছিলেন, ' যে লড়াই শুরু হয়েছে , সে লড়াই চলবে। বিভিন্নভাবে লড়াই চলবে। আমি তো চিরকাল এখানে থাকবো না, কিন্তু লড়াই চলবে। '
শেষ অবধি তাঁর এজলাস থেকে প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত ২টি মামলা সরানো হল। কিন্তু, আইনজ্ঞদের ব্য়াখ্য়া, বাকি মামলাগুলি আগের মতোই শুনবেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়।