কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, আশাবুল হোসেন, কলকাতা: শিল্পী-বয়কট ইস্য়ুতে আরও চরমে পৌঁছল অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও কুণাল ঘোষের সংঘাত। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে আজ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ''আমি যতটুকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানি, তিনি বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন।" পাল্টা মুখ খুলে কুণাল ঘোষ বললেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কথা অন্যের মুখে শুনব না।''(Abhishek Banerjee)


বুধবার ফলতা থেকে অভিষেক বলেন, "আমি যতটুকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনি, ছোটবেলা থেকে দেখেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বয়কট, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, সরিয়ে দাও, হঠিয়ে দাও, এই রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না।" অভিষেকের সেই মন্তব্যের পাল্টা কুণালকে বলতে শোনা যায়, "এ বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বোচ্চ নেত্রী। তিনি যা বলবেন মাথা পেতে নেব। এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে কোনও কথা শুনিনিষ ফলে তিনি কী ভবছেন, সেটা নিশ্চয়ই আর এক জনের মুখ থেকে শুনব না।" (Kunal Ghosh)


সংঘাত, চ্য়ালেঞ্জ, লড়াই, যুদ্ধ-যাই বলা হোক না কেন, আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নামা শিল্পীদের একাংশকে বয়কটের ডাক ঘিরে এখন কার্যতই সম্মুখসমরে  অভিষেক ও কুণাল। বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন কুণাল। খারিজ করে দিয়েছিলেন অভিষেক। পাল্টা একদা অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ঘনিষ্ঠ কুণালও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি এই দ্বন্দ্বের আবহে শুধু অভিষেকের বিপরীত মেরুতেই নন, সেই সঙ্গে নিজের অবস্থানেও অনড়।


এর আগেও কুণাল শিল্পীদের বয়কটের ডাক দিলে, অভিষেককে বলতে শোনা যায়, "দলের তরফ থেকে তো কেউ নির্দেশ দেয়নি! আমরা সকলের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি তো বলেছি, ১৪ অগাস্ট রাতে যাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন, রাতদখলের ডাক দিয়েছিলেন, তাঁদের কেউ সমর্থন করুক বা না করুক, আমি সাধুবাদ জানিয়েছি। কারও ভাল লাগতে পারে, কারও না লাগতে পারে। এটাই বাংলার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের পার্থক্য।"

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, খোদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের এই মন্তব্য়ের পরও, নিজের অবস্থানে অনড় থেকে কার্যত চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ে দেন কুণাল ঘোষ। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আর জি করের গোটা ফেজটার সময় অভিষেক বাইরে ছিলেন। বিষয়টির মধ্যে ছিলেন নাষ যে কুৎসা-চক্রান্ত ঝামেলা, যারা আমরা সামলেছি, আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা বলে দেব ডিফারেন্সটা কী।"

বুধবার নিজের অবস্থানে অনড় থেকে অভিষেক নাম না করে কুণালকেই খোঁচা দিলেন কি না প্রশ্ন ওঠে। কারণ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এই (বয়কটের) রাজনীতিতে বিশ্বাসী হতেন, তাহলে আজ যাঁরা এসব কথা বলছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে মমতাকে একটা সময় আক্রমণ করেছেন, তাঁরা আর দলে ফিরতে পারতেন না।"

অভিষেকের এই মন্তব্য়ের পরই জল্পনা জোরাল হয়, সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়ার পর কুণাল যেভাবে মমতাকে আক্রমণ করেছিলেন, যা যা বলেছিলেন, সেদিকেই কি ইঙ্গিত করলেন তিনি? এর কিছুক্ষণ পর কুণালও বুঝিয়ে দেন, তিনিও যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে সরতে নারাজ। তাই বলেন, "অবদানগুলি নেত্রীও জানেন, অভিষেও জানে। ২০১১ সালের ব্রিগেডে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ। ওরা যুবা বলে ঘোষণাটাও আমার মুখ দিয়েই করিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তী কালে দলের একাংশের কে বা কারা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে কী কী চক্রান্ত করেছিল, আমাকে কী কী চক্রান্তের শিকার হয়েছিল, তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন।"


শিল্পীদের বয়কটের যে ডাক দিয়েছিলেন কুণাল, গতকাল তা সরাসরি খারিজই করে দেন অভিষেক। সাফ বলেন, "আমি বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। তবে বলতে পারি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি অন্য কোনও সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ নেন, তা শিরোধার্য। তৃণমূল বয়কটের রাজনীতি করে না। প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে মানুষের। সকলে স্বাধীনচেনা। আমরা কেন বয়কট করতে যাব?"


কিন্তু কুণাল নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, "শিল্পীরা তৃণমূলকে ঘৃণার চোখে দেখে। ওই গালে গালে চড় মারো, তালে তালে অমুকৃতমুক...তৃণমূল কর্মীদের অনুষ্ঠানে ডাকছেন না তাঁরা। এর সঙ্গে গোটা বাংলার সব শ্রেণির শিল্পীকে বয়কটের কোনও সম্পর্ক নেই।"


এমনিতে তৃণমূলে বরাবর অভিষেকপন্থী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন কুণাল। কিন্তু শিল্পীদের বয়কট ইস্যুতে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করছেন তাঁরা। তাহলে কি দু'জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হল? প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেও। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কার দিকে কে, কে কোন শিবিরে, তা বোঝা দায়।