দীপক ঘোষ, বিটন চক্রবর্তী, রঞ্জিত হালদার, কলকাতা : ফের অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মুখে ডায়মন্ড হারবার মডেল। সেইসঙ্গে আরও একবার জল্পনা। বিরোধীদের দাবি, নিজের কেন্দ্রে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করে, আসলে তৃণমূল সরকারকেই খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন অভিষেক!


রবিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্রে এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের। আর সেখান থেকে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, এমন ৭৬ হাজার ১২০ জনকে বার্ধক্য় ভাতা দেওয়ার সূচনা করলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।


এদিন অভিষেক মঞ্চ থেকে বললেন, শুধু এটা ১ মাস নয়, ২ মাস নয়, রাজ্য় সরকার যদি কোনও কারণে না শুরু করতে পারে, যতদিন আমি বেঁচে আছি, আপনাদের চিন্তা করতে হবে না। এর ব্য়বস্থা আজ যেমন করেছি, আজীবন আপনি যতদিন থাকবেন, এই বার্ধক্য় ভাতা আপনি পাবেন।' বললেন, রাজ্য় সরকার যদি ভাতা দিতে না পারে, তাহলে উপভোক্তারা যাতে আজীবন এই ভাতা পায়, তার ব্য়বস্থা তিনি করবেন। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ঘুরিয়ে সরকারের ব্য়র্থতার দিকেই আঙুল তুললেন অভিষেক? এই প্রশ্নই এখন বিরোধীদের। BJP মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কটাক্ষ, 'কার্যত উনি তো একটা সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছিলেন। সরকারের কোন কোন ডিপার্টমেন্ট উনি পরিচালনা করেন, তা সকলের জানা'। এছাড়া এই বিপুল টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শমীক। 


সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'এই তালিকায় অনেকের নাম আছে, যাঁর বার্ধক্য ভাতার দরকার...হতেই পারে, যাঁদের বেশি দরকার, এমন অনেকে আছেন, যাঁরা বঞ্চিত। উনি এটা মডেল করতে বললেন, কী বললেন, এই মডেলটা সারা রাজ্যে চালু হোক ! তার মানে কি, রাজ্য সরকার ফেল?'


 



রবিবার  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ' অনেকে বলছে আমি ডায়মন্ড হারবার থেকে লড়ব। সবার লড়ার অধিকার আছে আপত্তি কোথায়? যে কেউ আসতে পারে আমি তো প্রথম দিনই বলেছি। বিজেপির ছোট, বড়, মাঝারি নেতা যে কেউ এবং কোনওরকম কোনও অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন। আবার বলবেন না নমিনেশন জমা দিতে দিল না। এসব বাহানা যেন শুনতে না পাই তার কারণ পঞ্চায়েতের সময়ও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়েছে।'


এর জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেছেন, ' শুধু গণতান্ত্রিকভাবে ভোটটা করতে দিন। গণতান্ত্রিকভাবে ভোটটা করতে দিন। লুঠ করবেন না। তাহলে দুধ আর জল আলাদা হয়ে যাবে। চ্য়ালেঞ্জ স্বীকার করলাম। ডায়মন্ড হারবারেই পদ্মফুলের যে প্রার্থী হবে, ওকে হারাবে। '


করোনাকালে প্রথমবার ডায়মন্ড হারবার মডেল তুলে ধরেছিলেন তিনি। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে গোটা রাজ্য়ে সংক্রমণের হার যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন ডায়মন্ড হারবারে নিম্নমুখী সংক্রমণ হারের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক ফেসবুকে লিখেছিলেন, 'আবার, পজিটিভিটি রেট ৩ শতাংশের নীচে। ধারাবাহিক প্রচেষ্টার দুর্দান্ত ফল। সামনের সারির কর্মীদের পাশাপাশি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিনন্দন জানাই। যাঁরা, পজিটিভিটি রেট কমাতে এবং ডায়মন্ড হারবার সংসদীয় এলাকার সবার ভালর জন্য কাজ করেছেন।' 


এরপর জেলা পুলিশের নতুন ভবন উদ্বোধনের সময়ও তাঁর গলায় শোনা গেছিল কার্যত একই সুর। অভিষেক বলেছিলেন,  ' আমি গর্ব করে বলতে পারি, What Diamond Harbour thinks toda, rest of Bengal thinks tomorrow ... শুধু বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত নয়, ভারতবর্ষের একাধিক জায়গায় ডায়মন্ড মডেলকে অনুসরণ করেছে।' 


রবিবার, ৭৬ হাজার ১২০ জন প্রবীণের হাতে ১ হাজার টাকা করে চেক তুলে দেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। অর্থাৎ, এই বাবদ ১ মাসে খরচ হবে, ৭ কোটি ৬১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।