হলদিয়া: শিক্ষকনিয়োগ দুর্নীতি হোক বা বগটুইকাণ্ড, গত কয়েক মাসে রাজ্যে একের পর এক মামলার তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা (CBI Investigation) সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। সেই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠলেও, এতদিন নিশ্চুপ ছিলেন তিনি। কিন্তু শনিবার হলদিয়ার সভায় তা নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কিছু মানুষ তল্পিবাহকের কাজ করছেন বলে কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন তিনি। 


অভিষেক আদালতের অবমাননা করেছেন, অভিযোগ বিরোধীদের


এ দিন হলদিয়ায় দলের শ্রমিক সংগঠনের সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন অভিষেক। সেখানে তিনি বলেন, "আমার বলতে বলতেও আজ লজ্জা লাগে, যে বিচারব্যবস্থার এক জন-দু'জন এমন রয়েছেন, যাঁরা সম্পূর্ণ যোগসাজশে কাজ করছেন। এক শতাংশ এমন আছেন, যাঁরা তল্পি বাহকের কাজ করছেন। কিছু হলেই সিবিআই দিয়ে দিচ্ছেন। আপনার যদি মনে হয়, এই সত্যি কথা বলার জন্য ব্যবস্থা নেবেন, ক্যামেরার সামনে দু'হাজার বার এই কথা বলব।" অভিষেক আরও বলেন, "খুনের মামলার তদন্ত আটকে দিচ্ছে। শুনেছেন কোনও দিন! আদালত চাইলে নিরাপত্তা দিতে পারে। আদালতের অধিকার আছে। কিন্তু খুনের মামলার তদন্ত স্থগিত করে দিতে পারেন না আপনি।"


এই প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, "এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন, বালখিল্য মন্তব্য নিয়ে কিছু বলার নেই আমরা। আমরা গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ভারতে সবকিছু সংবিধানকে সামনে রেখে পরিচালিত হয় আইন-আদালত সবকিছু। আমরা জনপ্রতিনিধির এবং ভারতের নাগরিকরা তা মেনে চলতে বাধ্য। সংবিধানই গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্য আইম, প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করা ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করি আমি। আসলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে পড়েছে। দলের পক্ষে নয় বলে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে।" বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেন অভিষেক। তাঁর প্রশ্ন, মমতারও কি একই মত যে হাইকোর্ট যা ইচ্ছে তাই করছেন? অভিষেকের মন্তব্যে দেশের সংবিধানের অবমাননা হয়েছে বলেও জানান অধীর।


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: অন্য দল থেকে এলে টিকিট নয়, লটারির মাধ্যমে প্রতিনিধি বাছাই, হলদিয়ায় জানালেন অভিষেক


অভিষেকের মন্তব্যে সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন  ভট্টাচার্য বলেন, "ওদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। বিচারব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই বিচারব্যবস্থার উপর আক্রমণ শুরু করেছে। এটা আদালতের অবমাননা, আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা। আসলে দুর্নীতির পক্ষএ অন্য বিচারপতি থাকুন, এমন গোপন আশঙ্কা প্রকাশ করা। এমন কাজ তৃণমূল নেতাদেরই মানায়। কারণ তাঁরা চান না , সৎ, ন্যায় বিচার হোক।"


মমতারও কি একই মত, প্রশ্ন বিরোধীদের


এ ব্যাপারে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "এমন রাজনৈতিক দল, এমন সরকার, পৃথিবীর কোথাও নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তা বলেছেন। সংবিধানের শপথ নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, গণতন্ত্রে আস্থা থেকে এখন  বিচারব্যবস্থার উপর আক্রমণ শুরু করেছেন।  এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা কি মেনে নেবেন রাজ্যবাসী? আদালতের রায়ে কেউ মনোকষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য আইন আছে। উচ্চ আদালতে যেতেই পারেন। কিন্তু এক জন সাংসদ খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিচারব্যবস্থাকে আক্রমণ করছেন, সেটা তাঁর পক্ষে শোভনীয় নয়, সমাজের পক্ষেও নয়।"