কলকাতা: বিজেপির নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত এসিপিকে দেখতে গেলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বড়বাজারে বিজেপি-র নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত হন তিনি। বুধবার তাঁকে দেখতেই হাসপাতালে গেলেন অভিষেক এবং সেখানে দাঁড়িয়ে বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন। 


এ দিন এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, "নবান্ন ঘেরাও এবং অভিযানের নাম করে যে হিংস্রতা, বর্বরতা, গুন্ডামি এবং রাহাজানির নিদর্শন বাংলার বুকে তৈরি করল একটি রাজনৈতিক দল, তাকে ২০১৯ সালের ১৪ মে বিদ্যাসগরের মূর্তি ভাঙারই পুনরাবৃত্তি বলা যেতে পারে। আন্দোলনের নামে গুন্ডামি, ভণ্ডামি, দাদাগিরি এবং গায়ের জোরে দুর্বৃত্তদের, দুষ্কর্মকারীদের কাজে লাগিয়ে পুলিশকে মারধর করা হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে ধরানো হয়েছে আগুন। নির্ম ভাবে লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে। এমনকি লোহার রড দিয়ে মারা হয়েছে। আজ ওঁকে দেখতে এসেছিলাম। বাঁ হাতে সিরিয়াস ফ্র্যাকচার। হাত ভেঙে গিয়েছে। সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন। পিঠ দেখা যাচ্ছে না।"


অভিষেক আরও বলেন, "গায়ের জোরে গুন্ডামি, মস্তানি হয়েছে। পুলিশকে স্যালুট। যে ধৈর্য, সংবেদনশীলতা এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছেন ওঁরা, তার জন্য কুর্নিশ জানাই। ওঁদের নিরলস পরিশ্রমের জন্যই আজ বাংলা সুরক্ষিত। দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ শহর কলকাতা। সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ যে কাল প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছেন। যে ইস্যু নিয়ে নবান্ন অভিযানের ডাক দেয় পুলিশ, সেই এসএসসি নিয়ে একটি শব্দ, অক্ষরও শোনা যায়নি তাদের মুখে। শুধু গুন্ডামি করেছে।"


মঙ্গলবার হাওড়া-কলকাতা জুড়ে ধুন্ধুমারের নেপথ্যে পুলিশি বাধাকে ঢাল করতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতাদের। পুলিশ বাধা দেয়, হয়রান হতে বলেই তাদের বিরুদ্ধে দলের কর্মী-সমর্থকরা রেগে যান বলে যুক্তি দেন অনেকেই। কিন্তু এ দিন অভিষেক বলেন, "বিজেপি নেতারা বলছেন যে, তৃণমূল, তৃণমূল সরকারের পুলিশ তাঁদের আসতে দেয়নি, বাধা দিয়েছে। বাধাপ্রাপ্ত হলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ল কারা? রড দিয়ে পুলিশকে মারল কে? পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরাল কারা? নিদারুণ একটা উদাহরণ হয়ে রইল যে, ক্ষমতায় এলে বাংলায় কী করত বিজেপি। বাংলাকে জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ, দুষ্কর্মকারীদের মুক্তাঞ্চল এবং স্বর্গরাজ্যে পরিণত করত ওরা।"


পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে এ দিন মমতাও বিজেপি-র নবান্ন অভিযান নিয়ে মুখ খোলেন। পুলিশ চাইলে গুলি চালাতে পারত। কিন্তু তা না করে, সংযম দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ দিন একই কথা বলেন অভিষেকও। তিনি বলেন, "পুলিশের কাছে সহজ উপায় ছিল। গুলি চালালে, ১০টা লোক মরলেই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যেত। ২১ জুলাই, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, সিপিএম-এর আমলে তেমনই হয়েছে। যাঁরা প্রশ্ন তোলেন বাংলায় কী পরিবর্তন হয়েছে, এটাই সেই পরিবর্তন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলে যে পুলিশ রয়েছে রাজ্যে, তারা সংবেদনশীল, সংযত এবং ধৈর্যশীল। অথর নিরস্ত্র অবস্থায়, একা পেয়ে সেই পুলিশের অফিসারকেই মারধর করা হল। হেলমেড ছিল বলে বেঁচে গিয়েছেন। উনি নিজেও সে কথা বললেন।"


এ দিকে, বিজেপির নবান্ন অভিযানে কলকাতা পুলিশের সেন্ট্রাল ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিগ্রহের ঘটনায় খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বড়বাজারে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় দায়ের হয়েছে আলাদা এফআইআর। নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হাত ভেঙে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে একা পেয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। খুনের চেষ্টা ছাড়াও পুলিশকে মারধর-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। এই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার ১।