প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: দুবাই যাওয়ার আগে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সফর সংক্রান্ত নথি এলফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর (Enforcement Directorate/ED) দফতরে জমা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ইডি সূত্রে খবর, বিমানের টিকিট, দুবাইয়ের হাসপাতালের ঠিকানা, ফোন নম্বর সংক্রান্ত তথ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাতেই সংস্থার কলকাতা এবং দিল্লির অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) অনুমতিতে চোখের চিকিত্‍সার জন্য দুবাই যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে যাবেন স্ত্রী রুজিরাও। 


বৃহস্পতিবার অভিষেককে চোখের চিকিৎসার জন্য দুবাই যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে, বিমানের টিকিট, দুবাইয়ের হাসপাতালের ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং দুবাইয়ে যেখানে থাকবেন সেখানকার ঠিকানা, ফোন নম্বর ED-কে জানাতে হবে বলে নির্দেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অভিষেকের সঙ্গে দুবাই যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর বেঞ্চ।


সূত্রের খবর, ১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত যেন কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে তাঁকে ডেকে পাঠানো না হয়, তার জন্য আবেদন জানিয়ে ED-কে চিঠি পাঠান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জবাবে ED-র তরফে তাঁকে দেশ ছাড়তে নিষেধ করা হয়। 


এর পর সম্প্রতি ED-র নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে দ্বারস্থ হন অভিষেক। মামলার শুনাতিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, ৩রা জুন চোখ পরীক্ষার দিন নির্ধারিত রয়েছে। ২০২০-র নভেম্বরে কয়লা পাচার মামলা শুরু হওয়ার পরেও দুবার বিদেশ যাত্রা করেছেন অভিষেক। তাহলে এখন এই নিষেধাজ্ঞার কারণ কী? ED এখনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেনি।  অভিষেক নিজে চিঠি দিয়ে তাঁর সমস্যার কথা ED-কে জানিয়েছেন।  তার পরও ED-র এই আচরণ কেন ? 


অভিষেক কোনও মামলায় অভিযুক্ত নন। তখন হাইকোর্টে ED-র আইনজীবী বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বলেছে যে, ২৪ ঘণ্টা আগে নোটিস দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠাতে পারবে ED। এখন ED যদি তাঁকে একদিন পরই নোটিস পাঠায়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি কীভাবে হাজিরা দেবেন! তাহলে তো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করা হবে। 


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল? কে চিকিৎসা করবেন? কোন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয়েছে? কার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে, তার কিছুই জানাননি তিনি। বিনয় মিশ্র প্রায় ৭৩০কোটি টাকা দুর্নীতিতে যুক্ত এবং দুবাই পালিয়ে গেছেন।   তিনি ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। তখন বিচারপতি বলেন, "আপনারা (ED) যখন জানেন যে, বিনয় মিশ্র দুবাইতে রয়েছেন, তখন তাঁকে গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ করেছেন আপনারা?" জবাবে ED-র আইনজীবী বলেন, "তাঁর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি হয়েছে।"  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুবাই গিয়ে বিনয় মিশ্রর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, এমনকি পালিয়েও যেতে পারেন বলে আশঙ্কার কথা জানান। কী এমন সমস্যা হয়েছে যে তাঁর চিকিৎসা ভারতে হচ্ছে না, এই প্রশ্নও তোলেন। রুজিরা গেলে, তাঁকেই বা কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, প্রশ্ন তোলেন। 


যদিও আদালত জানায়, বিমানের টিকিট, দুবাইয়ের হাসপাতালের ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং দুবাইয়ে যেখানে থাকবেন সেখানকার ঠিকানা, ফোন নম্বর ED-কে জানাবেন অভিষেক। অভিষেক এবং রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম FIR-এ নেই।  তাঁদের আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ED-র দিল্লির অফিসে একাধিকবার হাজিরা দিয়েছেন। তাঁর নামে নতুন করে কোনও সমন জারি করা হয়নি।  তাঁরা প্রয়োজনীয় নথিও জমা দিয়েছেন। তাই একথা বলা যায় না যে, তাঁরা তদন্তে সাহায্য করছেন না। সুপ্রিম কোর্ট অভিষেক এবং রুজিরার গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করেনি।যেহেতু হাসপাতাল বলেছে যে, অভিষেকের সঙ্গে একজন যেতে পারেন, তাই রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেতে কোনও বাধা নেই। অভিষেক একজন সাংসদ। তিনি মামলা শুরুর পরেও একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তাই তিনি দুবাই বা দুবাই থেকে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবেন এই আশঙ্কা অমূলক। 


সূত্রের খবর, ২৬শে মে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারেন যে, দুবাইতে তাঁর অ্যাপোয়েন্টমেন্ট ৩রা জুন নির্ধারিত হয়েছে। তিনি ১ জুনের বিমানের টিকিট কাটেন। ১০ জুন দুবাই থেকে ফেরার টিকিট করা হয়েছে। ৩১শে মে তিনি চিঠি দিয়ে ED-কে এই কথা জানান।