নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: আজ ১ জুলাই। জাতীয় চিকিৎসক দিবস (National Doctor's Day)। ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের অবদানকে সম্মান জানাতে প্রথম এই দিনটি পালন শুরু করা হয়। মানবজীবনে চিকিৎসকদের গুরুত্ব অপরিসীম। অসুস্থ হলে ভরসা করতে হয় চিকিৎসকদের উপরেই। আর কোভিড-অতিমারীর সময় থেকে চিকিৎসা পরিষেবার অন্যতম দিক হিসেবে সামনে এসেছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার।  কী হয় এই পরিষেবায়? কতটা কঠিন তার চ্যালেঞ্জ সামলানো? ডক্টরস ডে উপলক্ষে তারই নানা দিক তুলে ধরলেন চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী। 


প্রশ্ন: ক্রিটিক্যাল কেয়ার নাম শুনলেই বোঝা যায় সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল জায়গা।  এই ইউনিটের সবথেকে ক্রিটিক্যাল কাজ কোনটা?


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: ক্রিটিক্যাল কেয়ারে আমাদের সব সময় এক ধাপ এগিয়ে ভাবতে হয়। যখন কোভিড এসেছে, আমরা একধাপ এগিয়ে ভেবেছি। যখন হার্ট অ্যাটাক এসেছে, আমরা একধাপ এগিয়ে ভেবেছি। এ জন্য কিছু যন্ত্রপাতির সাহায্য লাগে আর কিছু প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ প্রয়োজন। হার্ট হোক, লাংস হোক, ব্রেন হোক বা লিভার হোক, যখনই কোনও গুরুতর অসুস্থতা হয় তখনই তার একটা ক্রিটিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট লাগে।  


প্রশ্ন: গুরুতর অসুস্থ মানুষগুলোকে নিয়ে যে পরিবারগুলোকে আসেন, তাঁদের হ্যান্ডেল করা এক জন চিকিৎসক হিসেবে কতটা কঠিন?


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ অত্যন্ত বিচলিত থাকেন, উৎকণ্ঠায় থাকেন। তাঁরা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটা মাঝামাঝি অবস্থায় থাকেন। সেক্ষেত্রে আগেও আমরা যা করতাম, অনেক কথাবার্তার মাধ্যমে করতাম। এখন ভিডিও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে করি। কোভিডের সময় আমরা কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে, ভিডিও কলের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করেছি। অনেক সময় তো বাড়ির পরিজন যাঁরা ছিলেন তাঁরা নিজেরাই কোয়ারান্টিনে ছিলেন।


প্রশ্ন:মানুষ যখন আপনাদের কাছে আসেন তখন তাঁদের একটা ধারণা হয় যে ডাক্তারবাবুর কাছে এসেছি সেরে যাবে মানে ভগবান হিসেবে দেখা হয়।


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: সত্যি কথা কারণ মানুষ যখন অসুস্থ হন তখন তো এটা ভাবেন না যে এটার কোনও ট্রিটমেন্ট নেই বা তার পরিণতি সুখকর হবে না। একটা আইটিইউ কিন্তু একটা মৃত্যুকেও আমাদের খুব মর্যাদা নিয়ে দেখতে হয়। তাঁর বাড়ির লোকের সঙ্গে মিলেঝুলে দেখতে হবে। 


প্রশ্ন: গত দুটো বছর, অতিমারী-মহামারীর সময় ক্রিটিক্যাল কেয়ারটা সাধারণ মানুষের কাছে জলভাতের মতো হয়ে গিয়েছিল। আপনাদেরও তো অন্য রকম একটা জিনিস ফেস করতে হয়েছে। সেই সময় অনেক আবেগ-অনুভূতিকে ডিল করতে হয়েছে। ওই সময়ের কথাটা যদি একটু বলেন...


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: আবেগ-অনুভূতির কথা যদি বলেন তা হলে বলব এই জিনিস যেন আর পৃথিবীতে ফিরে না আসে। এটাই কাম্য। কারণ ক্রিটিক্যাল কেয়ারের একটা বেড ক্যাপাসিটি আছে। সেটা মানবসম্পদের ক্ষমতাও হতে পারে। কোভিডের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে আমাদের হয়তো ২০টি শয্যা ছিল, কিন্তু ২০০ জন রোগী এসে পড়েছে। এই বাড়াবাড়িতে কেউই ঠিকঠাক পরিষেবা দিতে পারেনি। শুধু ভারতবর্ষ কেন, ভারতবর্ষের বাইরেও দিতে পারেনি। 


প্রশ্ন: কোনও ঘটনার কথা মনে পড়ে যেটা শেয়ার করতে চাইবেন?


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: কোভিডের ক্ষেত্রে আমাদের যা হয়েছে যে কোনও সন্তানসম্ভবা যাঁর অ্যাডভান্স প্রেগনেন্সি ছিল, তাঁদের যখন কোভিড হয়েছে, তাঁদের যখন লাং খারাপ হয়েছে এবং তাঁরা যখন প্রসব করেছেন এবং আরও অসুস্থ হয়ে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। কেউ কেউ একমো-তেও ছিলেন, তাঁরা যখন বাড়ি গিয়েছেন এবং একমাস-দেড় মাস পরে এসে সদ্যোজাতকে আলিঙ্গন করেছেন, সেটা আমরা কখনও ভুলব না। অনেক মাকে আমরা তাঁদের বাচ্চাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি এই কোভিডের করাল গ্রাস থেকে, তো সেই জিনিসটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। 


প্রশ্ন: কোনও সময় কোনও হতাশা?


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: সবচেয়ে বেশি হতাশা হয়েছে যখন আমাদের সমস্ত কোভিড-পরিষেবা  কানায় কানায় ভর্তি, দ্বিতীয় ঢেউ যখন শীর্ষে, তখন অনেক মানুষের ফোন এসেছে আমাদের কাছে। একটা বেডের জন্য, একটা ভেন্টিলেটরের জন্য।  আমরা হয়তো সবসময় পূরণ করতে পারিনি এবং সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো কিছু কাম্য ফল পাইনিও। সেগুলোর জন্য এখনও আমার মনটা কেমন কেমন করে। 


প্রশ্ন: আজকের দিনে আপনার মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চাই সাধারণ মানুষকে ?


চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী: হালেই একজন সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুতে আমরা দেখেছি যে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ হতে পারে। আগেও নানা জায়গায় বহু বার বলার চেষ্টা করেছি যে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ কিন্তু নানা ভাবে এড়ানো যায়। যদি কিছু প্রশিক্ষিত মানুষ থাকেন যাঁরা যতক্ষণ না পর্যন্ত মেডিক্যাল  সাহায্য আসছে সিপিআর দেবেন, তা হলে এটা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। এই ডক্টরস ডে-তে এই বার্তাই দেব আমরা। 


আরও পড়ুন:"চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বের থেকে কোথায় এগিয়ে ভারত ?" যা বললেন প্রখ্যাত চিকিৎসক