নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : আজ ১ জুলাই। ন্যাশনাল ডক্টর'স ডে (National Doctors Day 2022)। ফি বছর মানুষের জীবনে চিকিৎসকদের অবদানকে সম্মান জানাতে এই দিনটি পালন করা হয়। ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের অবদানকে সম্মান জানাতে প্রথম এই দিনটি পালন শুরু হয়। এবছরও দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। এই উপলক্ষে চিকিৎসক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, অনুভূতির কথা তুলে ধরলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (Shyamashis Banerjee)। 


প্রশ্ন : আপনার কাছে Doctor's Day আলাদা করে কী অর্থ বহন করে ?


চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় : দায়িত্ব-কর্তব্যের ওপর অতিরিক্ত কিছু। সবথেকে দামী জিনিস-প্রাণটা থাকে চিকিৎসকের ওপর। 


আরও পড়ুন ; ' সত্যিই কি কোনও ডাক্তার চিকিৎসায় গাফিলতি করতে পারেন ? সম্ভব? ' : ডা. সুমন মিত্র


প্রশ্ন : এটা কি বাড়তি মানসিক চাপ ?


চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় : চিকিৎসকরা ভগবান নন, শয়তানও নন। আমার-আপনার মতোই আর একটা মানুষ। মানুষ এটা মানতেই পারেন না যে, কারও মৃত্যু হতে পারে বা কেউ চিকিৎসায় সাড়া নাও দিতে পারেন। সব চিকিৎসা সবার ওপর সমানভাবে কাজ করবে, এটাও হয় না। আমার এক বন্ধু বলেন, চিকিৎসাশাস্ত্রের ৫০ ভাগ তো এখনও অজানা। মনে রাখতে হবে, একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক ডাক্তার-নার্সের মতোই কাজ করেছেন। কখনও কখনও বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর পিপিই-টা প্রচণ্ড গরমে হয়তো পরতে পারেননি, খুলে ফেলতে হয়েছে তাঁকে।



প্রশ্ন : আমাদের দেশ চিকিৎসাশাস্ত্রে কোন কোন জায়গায় এগিয়ে ?


চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় : এখানে হাসপাতালের চিকিৎসককে ২০০ জন রোগীকে আউটডোরে দেখতে হচ্ছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, আমার ডিগ্রি যা আছে কেড়ে নিতে পারেন, কিন্তু প্রথম বিশ্বের একজন চিকিৎসক আউটডোরে বসে ২০০ জন রোগীকে দেখতে পারবেন না। যদি দেখতে পারেন, দেখিয়ে দিক। আমার সমস্ত কোয়ালিফিকেশন আপনার (সাক্ষাৎকারপ্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে) পায়ে ফেলে দেব। পারবেন না। এখানে আমরা এগিয়ে।


প্রশ্ন : চিকিৎসার খরচ নিয়ে মাথাব্যথার শেষ নেই। এনিয়ে কী বলবেন


চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এনিয়ে আমি একমত-ই শুধু নই, দশমত। তার কারণ, চিকিৎসাশাস্ত্র পশ্চিমী দেশে ওয়েল-ফান্ডেড। মানে, আপনি ট্যাক্স দিলেন। সেই ট্যাক্সপেয়ারের টাকা দিয়ে আপনারই চিকিৎসা হল। আপনি ভাবলেন ফ্রি-তে চিকিৎসা হল। কিন্তু, আমাদের দেশে তো ২-৩ শতাংশ মানুষ কর দেন। ৯৭ শতাংশ মানুষ ট্যাক্সই দেন না। পশ্চিমী দুনিয়ায় অন্তত ৩০ শতাংশ লোক ট্যাক্স দেন। এই ফাঁকটা ট্যাক্সপেয়ারের টাকা দিয়ে চালানো যাবে না। সেজন্য বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট-বণ্টন এক শতাংশের কম। সেখানে পশ্চিমী দুনিয়ায় ৮-৯ শতাংশ।


এপ্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর বার্তা, দয়া করে অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। এমন হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ একটা নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করতে প্রত্যোকদিন ১০ হাজার টাকার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হচ্ছে।