কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: 'দণ্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার', চাকরিহারাদের হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সওয়াল প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করতে রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি তুললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসু। রাজ্য রাজনীতির যাবতীয় চর্চার অভিমুখ এখন 'দুর্নীতি'-র দিকেই। এ নিয়ে যখন সপ্তমে সুর, ঠিক তখনই এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। একই দফতরের মন্ত্রী, কিন্তু কেন নিয়োগ দুর্নীতির কথা টের পেলেন না?
বুধবার এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্রাত্য বসু বলেন, 'যাঁদের চাকরি গেছে,কোর্টের নির্দেশেই গেছে। কোর্ট SSC-কে তালিকা প্রকাশ করতে বলেছিলেন এবং এসএসসি সেটা করেছে। সেই তালিকায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই আছে। এমনি সাধারণ মানুষও সেই তালিকায় আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। সেই আত্মহত্যা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সার্বিক মানবিকতার দিক থেকে একটা কথা বলেছেন। 'মুখ্যমন্ত্রী যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন এবং যাঁরা বঞ্চিত সকলেরই মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের রাজ্যে দুর্নীতি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। কেউ জেলে গেছেন, কেউ কোর্টে লড়ছেন। 'মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বলেছেন যাতে কারও চাকরি না যায়, পেটের ভাত না যায়। সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রাক্তন বিচারপতিও বলেছেন চাকরি যাওয়া মৃত্যুদণ্ডের সামিল। এর পর ব্যাপমের তুলনা টেনে ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, ব্যাপমের মতো ঘটনা কিন্তু আমাদের রাজ্যে ঘটেনি। কেউ খুন হয়ে যায়নি, কাউকে ট্রাক এসে চাপা দিয়ে যায়নি।
গতকাল একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমরা ক্ষমতায় আসার পর একটা সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তাহলে তোমরা কেন খাচ্ছো? দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়বার ক্ষমতা আছে।' ভুরি ভুরি বেনিয়ম, দুর্নীতি...জাল-জোয়াচুরির অসংখ্য় অভিযোগ। একের পর এক তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হচ্ছেন! আদালতের নির্দেশে কার্যত প্রতিদিন চাকরি যাচ্ছে অযোগ্য়দের!অন্য়দিকে মাসের পর মাস পথে নেমে বিক্ষোভ-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে যোগ্য়রা! এই প্রেক্ষাপটে চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্য়মন্ত্রী!
আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন! চাকরি থেকে বরখাস্ত না করার পক্ষে সওয়াল করলেন! স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে, ইতিমধ্যেই চাকরি গেছে বহু অযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। সম্প্রতি যে তালিকায় যোগ হয়েছে, এসএসসির গ্রুপ সি। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি গেছে ৮৪২ জনের। এর আগে তাঁর নির্দেশেই, চাকরি গেছে ১ হাজার ৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীর।
নবম-দশমে চাকরি গেছে ৭৭৫ জনের। গত বছরের মে-জুন মাসে, গ্রুপ ডি-র ৬০৯ এবং গ্রুপ সি-র ৩৮১ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে অযোগ্যদের চাকরি যাওয়ার বিরুদ্ধে সওয়াল করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অযোগ্য়দের চাকরি যাচ্ছে আদালতের নির্দেশে। আবার চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন মুখ্য়মন্ত্রী! সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতি!