নয়াদিল্লি: বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার উল্টে দেওয়ার রীতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে (Uddhav Thackeray) সরকারের পতন তার জলজ্যান্ত উদাহরণ (Shiv Sena)। সেই মামলার শুনানিতে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সতর্কবার্তা দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বলা হয়েছে, ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে  সতর্ক হওয়া উচিত রাজ্যপালের।


শিবসেনার উত্তরাধিকার নিয়েও আইনি টানাপোড়েন চলছে


২০২২ সালে মহারাষ্ট্রের তদানীন্তন উদ্ধব ঠাকরের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটান শিবসেনারই একনাথ শিন্ডে। উদ্ধবের শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি সরকারকে উৎখাত করে, বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেন তিনি। তার পর শিবসেনার উত্তরাধিকার নিয়েও দু’জনের মধ্যে আইনি টানাপোড়েন চলছে।


সেই আবহেই বুধবার রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সতর্কবার্তা দিল শীর্ষ আদালত। মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতির জন্য প্রাক্তন রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারিকে তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। উদ্ধব সরকারকে উৎখাত করতে বিজেপি-র তরফে তিনি অনুঘটকের কাজ করেছিলেন বলে অভিযোগ শিবসেনার।


শীর্ষ আদালত যদিও কোশিয়ারির নাম উল্লেখ করেনি। তবে রাজ্য়পালের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েনি। এ দিন শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলে, “আস্থাভোটের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সতর্ক হওয়া উচিত। কারম এতে সরকার পড়ে যেতে পারে। সরকার পড়ে যায়, এমন কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজ্যপালের যুক্ত হওয়া সমীচীন নয়।”


এ দিন আদালত আরও বলে, “এ ভাবে চলতে থাকলে, শাসকদল থেকে দলে দলে লোকজন বেরিয়ে যেতে শুরু করবেন। সে ক্ষেত্রে শাসকদলকে সরকার থেকে উৎখাত করায় জড়িয়ে পড়বেন রাজ্যপাল। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এমনটা হওয়া কাম্য নয়।”


আরও পড়ুন: EPFO Update: পেনশন নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত ! আরও টাকা পাওয়ার সময়সীমা বাড়াল সরকার


গত বছর উদ্ধব নেতৃত্বাধীন মহা আঘাডি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন একনাথ। তার পর শিবসেনা ভাঙিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যে নিজের সরকার গড়েন। অসমের পাঁচতারা হোটেলে যখন ছিলেন একনাথ এবং তাঁর অনুগামীরা, সেই সময়ই আস্থাভোটের নির্দেশ দেন কোশিয়ারি। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই পদত্যাগ করেন উদ্ধব। তার পর প্রত্যাশা মতোই বিজেপি-র সমর্থনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন একনাথ।


তার পর থেকে দুই শিবিরের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। আসল শিবসেনা কে, তা নিয়েই লড়াই। বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনার আসল দাবিদার উদ্ধব বলে দাবি তাঁর শিবিরের। অন্য দিকে, একনাথ শিবিরের দাবি, পুরনো শরিক বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন উদ্ধব। তাই শিবসেনার উপর কোনও দাবি নেই তাঁর। গত মাসে শিবসেনা নামটি এবং দলের প্রতীকচিহ্ন একনাথ শিবিরের হাতেই তুলে দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন উদ্ধব।


আদালতে শিবসেনার যুক্তি, আস্থাভোটের সময় একনাথ এবং বিদ্রোহী ১৫ জন বিধায়ককে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে আস্থাভোটে ভোটদানের অধিকারই থাকার কথা নয় তাঁদের। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “তিন বছর ধরে একসঙ্গে ঘর করছিলেন। রাতারাতি এমন কী ঘটল যে দাম্পত্য ভেঙে গেল?” রাজ্যপালের নিজেকে এই প্রশ্ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, “সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে, সেখানে আস্থাভোটের প্রশ্ন আসে। এ ক্ষেত্রে কি তেমন কিছু ঘটেছিল? বিধায়কদের মধ্যে মতানৈক্য বা মতবিরোধ হলেই কি আস্থাভোটের নির্দেশ দেওয়া যায়? নির্দিষ্ট ভাবে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কার্যকর করার জন্য রাজভবনের ব্যবহার হওয়া কাম্য নয়।”


তিনটি দলের সরকার, বিরোধ একটি দলে, স্মরণে রাখা উচিত ছিল রাজ্যপালের, বলল সুপ্রিম কোর্ট


আদালতে এ দিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এর প্রেক্ষিতে জানান, উদ্ধব সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না বিদ্রোহী বিধায়করা। তাতে প্রধান বিচারপতি বলে, “শাসক দলের অন্দরে মতবিরোধ হলেই আস্থাভোট ডাকতে হবে, এই যুক্তি খাটে না।” তিনটি দলের জোট সরকার যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে একটি দলের অন্দরে বিরোধ দেখা  দিয়েছিল। রাজ্যপালের বিষয়টি স্মরণে রাখা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।