অঞ্জন চক্রবর্তী, কলকাতা : ওয়াসিম খান। সৈকত রায়। হরি ভরদ্বাজ। দলজিৎ কৌর। এক-লহমায় পরপর চারটে নাম বলে গেলেন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো চারজন এগিয়ে গেলেন তাঁদের নাম শুনে। কারোর ভাগে এক পাউন্ড, কারোর হাফ তো কারোর দুই। বড়দিনের (Christmas) উৎসবে মেতে উঠতে টাটকা কেক (Cake) নিতে হাজির সকলে।
মধ্য কলকাতার এক বেকারি (Bakery)। আরও ভাল করে বললে তালতলা। ছোট-ছোট গলি ধরে এগোলেই কারখানা, রঙের দোকানের পাশপাশি হাজির একের পর এক বেকারি। যেখানে গিয়ে অর্ডার দিয়ে হাতে তৈরি কেক নিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। শীতের বিকেলে যেখানে ঢু মারলেই চেনা রঙয়ের উগ্র গন্ধ ক্রমশ ফিকে করে দেয় কেক তৈরির সুঘ্রাণ।
বড়দিনের আগে স্বাভাবিক ভাবেই দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। সারি দিয়ে বসে চলছে কেক তৈরি। বড় বড় পাত্রগুলোর একদিকে বসে একজন ক্রমশ মিশিয়ে চলেছেন ময়দা, চিনি, ডিম। আর উল্টোদিকে থাকা ব্যক্তি ক্রমশ পাকিয়ে চলেছে কেকের মণ্ড। প্রাথমিকভাবে মণ্ড তৈরির পর ড্রাই-ফ্রুটস থেকে বাকি অন্যান্য সরঞ্জাম মেশানোর পর তা চলে যাচ্ছে লম্বা ওভেনে। আর হাতে গরম কেক নিয়ে হাসিমুখে বাড়ির পথ ধরছেন কেক-প্রেমীরা। ক্রেতাদের মুখে হাসি ফোটালেও বেকারির মালিকদের মুখে অবশ্য হাসি ততটা চওড়া নয়।
এবিপি লাইভের সঙ্গে কথা বলার মাঝে কাজল বেকারির অন্যতম অংশীদার কাজল হায়দার খান বলছিলেন, 'কাঁচামালের দাম প্রচুর বেড়েছে। আর আগের মতো ভিড় আর কোথায় এখন।' করোনা (Corona) মহামারীর ধাক্কায় ধুঁকছে একাধিক ব্যবসা। যার মধ্যে অন্যতম কলকাতার বেকারিগুলোও। সারাবছর বেশিরভাগ সময়ই কারিগরদের কাটে বিস্কুট তৈরি করে। কেকও তৈরি হয় বটে, তবে পরিমাণে বেশ অল্প। বড়দিন এলে অবশ্য বাড়ে ব্যবসা।
বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে বেকারিগুলো চলছে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম সেভাবে বেকারি ব্যবসায় এগিয়ে আসছে না বলেও আফশোস ঝড়ে পড়ছিল মধ্য বয়স্ক বেকারি মালিকের গলায়। অনিশ্চয়তা সঙ্গী করেই হাসি ফোটানোর বর্তমান সঙ্গী বেকারিগুলোর। আশা-আশঙ্কার ভাবনায় আকাশে ডুব দেওয়ার সময় অবশ্য নেই। বরং ক্রেতাদের হাতে কেক তুলে দিয়ে হাসিমুখে রয়েছে 'মেরি ক্রিসমাস' বার্তা।
দেখুন- আলোর মালায় ঝলমলে তিলোত্তমা, দেখে নিন পার্ক স্ট্রিটের বড়দিনের সাজ