অভিজিৎ চৌধুরী, আশাবুল হোসেন ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ কংগ্রেসকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরাজ্যে দু'টি আসন ছেড়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করলেন মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। যা নিয়ে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস ! শুরু হয়েছে তরজাও। 


জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে একমঞ্চে রয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। কিন্তু, এরাজ্য়ে কি কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হবে ? হলে কী সমীকরণে ? কে কতগুলো আসনে লড়বে ? সেসব কিছুই এখনও স্পষ্ট নয়। তার মধ্য়েই, চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ! তিনি বলেন, 'কাগজপত্রে যা দেখছি যে, চিফ মিনিস্টার পশ্চিম বাংলার, উনি দুটো সিট বহরমপুর ও দক্ষিণ মালদা দিয়েছেন আমাদের।' 


২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এরাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে দু'টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। মালদা দক্ষিণে জেতেন আবু হাসেম খান চৌধুরী।
বহরমপুরে জয়ী হন অধীর চৌধুরী। এবারও এই আসন দু'টি তৃণমূলনেত্রী কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে দাবি করলেন মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ। তিনি বলেন, 'বলেছেন যে, দুটো আপনারা নেন। আমাদের আরও কিছু দাবি আছে। আমাদের দাবিগুলো তাদেরকে জানাচ্ছি বা জানানো হচ্ছে।'

সূত্রের দাবি, ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে ২টো আসন দিতে চাই। এর পরদিনই বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাহুল গান্ধী-সহ শীর্ষনেতারা। সূত্রের দাবি, সেখানে অধীর চৌধুরী বলেন, আমি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দয়ায় লড়তে চাই না। এই মুহুর্তে ৭টি লোকসভায় কংগ্রেস ভাল জায়গায় আছে। মুর্শিদাবাদের ৩টে, মালদার দু'টো, দার্জিলিং এবং রায়গঞ্জ। এই আসনগুলোতে ভাল জায়গায় আছে দল।

কিন্তু, এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই চাঞ্চল্য়কর দাবি করলেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তবে তিনি একথা বললেও, বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, উনি (আবু হাসেম খান চৌধুরী) আলাদাভাবে কথা বলতেই পারেন। আমার এসম্পর্কে কিছু জানা নেই ফলে কিছুই বলার নেই।


এনিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "অনেকবার অনেক কথা বলেছেন। ওদের সঙ্গে বহুবার কথা বলে ঠকেছেন। আবার বাইরে এসে বলেছেন, আমাকে ঠকিয়ে দিয়ে চলে গেল। বিশ্বাসঘাতকতা করল...ইত্যাদি ইত্যাদি। উনি যা বলছেন আমি তার কথার কোনও উত্তর দেব না। কিন্তু, যে কেউ এটা বিবেচনা করবেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংসদে কংগ্রেসের যে দুটো আসন, এই দুটোতেই কিন্তু যাঁরা জিতেছেন, সেখানে সিপিআই তার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস জিতেছে, বামেরা তার সঙ্গে ছিল।"

এপ্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "সিপিএম চাইছে, কংগ্রেস যেন তৃণমূলের সঙ্গে জোটে না আসে। কারণ, সিপিএমের অস্তিত্বের লড়াই। সংকটটা বিজেপির, আর  সংকটটা সিপিএমের। এরাই জোট নিয়ে চিন্তায় আছে। বিজেপির আশঙ্কা হচ্ছে, ক্ষমতা থেকে চলে যাবে। আর সিপিএমের শঙ্কা হচ্ছে, দলটা উঠে যাবে। সেটা প্রমাণিত হয়ে যাবে।" 


এনিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'তাতে আমাদের কী। বেল পাকলে কাকের কী ! ডালু সাহেব কী বললেন তাতে আমাদের কী। '

শেষ অবধি এরাজ্য়ের জোটের ছবিটা কী দাঁড়াবে? কবে তা পুরোপুরি বোঝা যাবে? সেটাই এখন দেখার।