কলকাতা: রাজ্যে ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে ডেঙ্গি (Dengue Scare)। বাড়ছে মৃত্যু। কোথায় গিয়ে থামবে এই ভয়াবহতা? কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে ডেঙ্গি? স্বজনহারাদের হাহাকারের মধ্যেই রাজ্যের গোটা চিকিৎসক মহল এখন এমনই একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। কী বলছেন চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত চৌধুরী (Arunachal Dutta Chowdhury)। তাঁর কথায়, এই লড়াইয়ে জয়যুক্ত হওয়ার আশা নিয়েই সকলকে লড়ে যেতে হবে।
বাড়ছে ডেঙ্গির ভয়াবহতা, উদ্বেগে চিকিৎসক-মহল
ডেঙ্গির এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কেন? চিকিৎসকের বক্তব্য, 'সারা বিশ্বে ডেঙ্গি রোগ বেড়েছে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ, ডেঙ্গি প্রবণ এলাকায় বাস করেন। এর একাধিক কারণ রয়েছে। তবে এর মধ্যে অন্যতম কারণ অবশ্যই উষ্ণায়ন। মানুষ যেভাবে প্রকৃতিকে নষ্ট করেছে, যেভাবে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন করেছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, সেখানে ডেঙ্গির মশা জন্মাবার সুযোগ, আমরা মানুষেরাই করে দিয়েছি। একইসঙ্গে আরও একটি কথা অনস্বীকার্য, ডেঙ্গি পরীক্ষাও বেড়েছে। যে কারণে পৃথিবীতে এখন এমন দেশ পাওয়া বিরল যেখানে আজ ডেঙ্গি রোগ ধরা পড়ছে না।'
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে উন্নয়নশীল দেশগুলির কী কী অসুবিধা? 'এই উন্নয়নশীল দেশগুলির ব্যাপারে একটা কথা বলার আছে। এদের প্রধান অসুবিধা হচ্ছে বাজেট। ধরা যাক, এই ডেঙ্গির ব্যাপারেই, একটা বাজেট রয়েছে, তার একাংশ খরচ করা হবে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আর একটি অংশ খরচ করা হবে চিকিৎসায়। কিন্তু বাজেট এতই অপ্রতুল, যে দুই দিকেই ঘাটতি পড়ে যায়। যখন মেডিক্যাল কলেজে পড়তাম, কোনও এক ডিপার্টমেন্টে লেখা ছিল, 'আমাদের সাধ আছে, সাধ্য নাই', কিন্তু শেষ কথাটা আরও মারাত্মক, 'সাধনা তাহার চাইতেও কম'। আমাদের সাধনা সত্যিই নেই, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় যে আমরা কীভাবে লড়ব।' বলছেন চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত চৌধুরী।
ডেঙ্গির ভ্যাকসিন যদি বেরোয়, তার দাম কী হবে? সেই নিয়েও উদ্বেগে চিকিৎসক। তিনি বলছেন, 'ডেঙ্গি ভাইরাস সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। কিন্তু এই ভাইরাস চেহারা বদল করে এখন চারটি রূপে আমাদের মধ্যে আছে, জানি না ভবিষ্যতে আরও রূপ বাড়বে কি না। এবং এই রূপগুলো ক্রমশই ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতর হয়ে উঠছে। ডেঙ্গির কোনও ভ্যাকসিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও অনুমোদন দেয়নি। কোনও কোনও দেশে চলে, যদিও আমাদের দেশে নেই। টিকার কথা বললে একটা যেন ভয়ও লাগছে। কোভিডের ভ্যাকসিন আমরা দিতে পেরেছি সবাইকে। অন্যান্য কিছু রোগের ভ্যাকসিনের চলে ওষুধ কোম্পানির ব্যবসা। হার্পিস জস্টারের ভ্যাকসিনের দাম দশ থেকে এগারো হাজার টাকা। আমাদের দেশের পক্ষে সত্যিই বাড়াবাড়ি। ডেঙ্গির ভ্যাকসিন বের হলে তার দাম কত হবে জানা নেই। আরও একটা হচ্ছে ডেঙ্গি ভাইরাসের চিকিৎসা করাও জানা নেই। জটিলতার চিকিৎসা জানা আছে, সেই চিকিৎসা হয়। কিন্তু ডেঙ্গি ভাইরাস মেরে ফেলার মতো কোনও চিকিৎসা বা ওষুধ এখনও আমাদের জানা নেই।'
ডাক্তারবাবু জানাচ্ছেন, 'সমীক্ষায় প্রমাণিত, সাধারণ ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার, ১ শতাংশ বা তার থেকে খানিক কম বেশি। এবং মারাত্মক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে, অর্থাৎ আগে যাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে তাঁরা আবার যদি নতুন করে আক্রান্ত হন, সেখানে মৃত্যুর হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ফলে আমাদের দেশের জনসংখ্যা ও আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ওই ১ শতাংশ মৃত্যুহারও অনেকটাই বেশি।'
ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক হতে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। 'সংক্রমণ আরও বাড়বে, হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যাও বাড়বে, প্রস্তুত থাকতে হবে। অতিরিক্ত রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে হবে। আক্রান্তদের চিহ্নিত করতে ল্যাবরেটরি তৈরি রাখতে হবে', জানানো হয়েছে। আগামীকাল মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে নবান্নে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া নিয়ে ফের রিভিউ বৈঠক।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন