কলকাতা : আর কত মৃত্য়ু? আর কত প্রাণহানি?

  ভয়ঙ্কর ডেঙ্গি (Dengue ) কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক জীবন। মশাবাহিত রোগের গ্রাসে চলে যাচ্ছে ছোট ছোট শিশুর প্রাণও। এবিপি আনন্দ-র 'যুক্তি-তক্কো' ( Jukti Takko )  অনুষ্ঠানে সকলের মন ভেঙে দিল সন্তানহারা মা শুভ্রা আইচের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। সেই সঙ্গে তুলল রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আবারও তুলে দিল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন । 

ছেলে ছিল ক্লাস ফোরের ছাত্র। সে আর নেই ! মশাবাহিত রোগ কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। কিন্তু মায়ের কাছে সে তো অতীত নয়...তাই মা বক্তব্যের শুরুতেই বলে ফেললেন, ' আমার ছেলে যাদবপুর হাইস্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। ' হয়ত এখনও 'পড়ত' শব্দটা বলতে তাঁর মন চায় না। 


গত মাসের ২৯ তারিখ তার জ্বর হয়। ডেঙ্গি টেস্ট করানো হয়। ধরা পড়ায় মা সন্তানকে নিয়ে ছোটেন বাঘাযতীন হাসপাতালে। কিন্তু মায়ের কথায় ' ওখানে ওরা ছেলেকে দেখেইনি, বলল এখানে হবে না, অন্য কোথাও নিয়ে যান'। মা ছোটেন বিজয়গড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করান তিনি। দুদিনে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। দুদিনের মাথায় শুরু হয় লুজ় মোশন। জানানো হয় চিকিৎসকদের। তাঁরা জানান, স্যালাইন বেশি দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাই খিঁচুনি বেশি হচ্ছে আর পাতলা মল হচ্ছে। তাই স্যালাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত শুরু হয়। হাত - পা ফুলতে শুরু করে। মা ছুটে যান ডাক্তারের কাছে - দেখুন ওর শ্বাসকষ্ট হয়ে। মায়ের দাবি, ডাক্তাররা বলেন, না শ্বাসকষ্ট নয়, ওর মনে হয় গ্যাস হয়েছে। আপনি পিঠ ডলে দিন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। মা আবার ছুটে যান সিস্টারদের কাছে, বলেন, দেখুন ও শ্বাস নিতে পারছে না। সিস্টাররা বলেন, আপনি আমাদের থেকে বেশি জানেন, আমরা বমির ওষুধ দিয়ে দিয়েছি, ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তাররা ব্লিডিং, রক্তবমি দেখেও বলে, আপনি এভাবে রাখুন ভয়ার কিছু নেই। কিন্তু দুপুরে অন্য ডাক্তার এসে বলেন 'পেশেন্ট ক্রিটিক্যাল, আপনারা অন্যত্র নিয়ে চলে যান'। এমআর বাঙুর হাসপাতালেও জায়গা হয় না, হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, আইসিইউ নেই । ভর্তি করা যাবে না। সেখান থেকে চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার চিকিৎসা করা হয়। মায়ের কথায়, 'ওরা যথেষ্ট চেষ্টা করলেও বাঁচাতে পারেনি আমার ছেলেকে। বিজয়গড় স্টেট জেনারেল হাসপাতাল আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। ইচ্ছে করে তারা খুন করে ফেলেছে আমার ছেলেকে।' 

সন্তান হারিয়ে সর্বহারা মায়ের প্রশ্ন, '  এরা কীসের ডাক্তার, কোথা থেকে ডাক্তারি পড়েছে ? আমি যেখানে বুঝতে পারছি, আমার ছেলের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, ওরা বুঝতে পারছেন না। আজ আমার ছেলে চলে গেছে। কাল অন্য কারও ছেলের সঙ্গে এটা হতে পারে। এই ধরনের ডাক্তার যেন না থাকে। যারা এটা করেছে, তাদের যেন শাস্তি হয়, সেটা আপনারা দেখুন, অন্য কারও মা যাতে এরকম না কাঁদে।' ডুকরে উঠলেন মা।