ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, ঝিলম করঞ্জাই,রঞ্জিৎ হালদার,সন্দেশখালি : সন্দেশখালিকাণ্ডে ( Sandeshkhali )  ধৃত তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা (  Shibu Hazra arrested  )  ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ হয়েছে এক মহিলার জবানবন্দির পর। শনিবার রাজ্য় পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, অভিযোগকারিণী পুলিশের কাছে বয়ান দেননি, ম্য়াজিস্ট্রেটের কাছে বয়ান দেন। যা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, তাহলে কি পুলিশের ওপর আর আস্থা নেই সন্দেশখালিবাসীর?



শনিবার সন্দেশখালিকাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবু হাজরাকে শনিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার আগে এদিনই শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে যুক্ত হয় গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা। রাজ্য় পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন, ম্য়াজিস্ট্রেটের কাছে এক মহিলার গোপন জবানবন্দির পর, এই মামলা রুজু হয়। 


রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার নিজেই জানিয়েছেন, তিনি আমাদের কাছে বয়ান দেননি। তিনি ম্য়াজিস্ট্রেটের কাছে বয়ান দেন। জ্য় পুলিশের ডিজির এই বক্তব্য়কে হাতিয়ার করেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, নির্যাতিতা ম্য়াজিস্ট্রেটের কাছে বয়ান দিলেও, পুলিশের কাছে বয়ান দিলেন না কেন? তাহলে কি সন্দেশখালির মহিলারা পুলিশের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেনই না ? 



সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন,  অভিযোগকারিনী পুলিশের কাছে বয়ান দিলেন না কেন? কারণ পুলিশ শোনার মতো জায়গায় নেই। পুলিশকে ভরসা করা যায় না। ম্য়াজিস্ট্রেটের কাছে গোপনজবানবন্দি যারা দেয়, তারা পুলিশের কাছে বলার সাহস দেখায় না। 


আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, নির্যাতিতা এমন একজনের কাছে বয়ান দিচ্ছেন যিনি পুলিশের লোক নন, কিন্তু বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, আইনের মানুষ। তার মানে তাঁর পুশের উপর তার ভরসা নেই, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। 


বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, পুলিশের কাছে এফআইআর করার সাহসও পায়নি লোকেরা। 


সন্দেশখালিতে মহিলাদের ওপর যৌন নির্যাতন হয়েছে কিনা, এই নিয়ে রাজ্য় পুলিশের সঙ্গে টানাপোড়েনের আবহে, বুধবারই জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে সোশাল মিডিয়ায় লেখা হয়,আমাদের তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে, যে পশ্চিমবঙ্গের নির্যাততাদের স্থানীয় পুলিশ হুমকি দিচ্ছে,সামনে এসে যৌন এবং শারীরিক নির্যানের অভিযোগ জানাতে বাধা দিচ্ছে।  সন্দেশখালির মহিলাদের একাংশ আবার পুলিশ এবং শিবু হাজরার মধ্য়ে আঁতাঁতের অভিযোগও করেছিলেন। কেউ বলেছিলেন, 'এই পুলিশ, এদের কাছে অন্যায় করলে আসলে বলবে, শেখ শাহজাহানের কাছে যাও। শেখ শাহজাহানের কাছে গেলে বলবে, শিবু হাজরার কাছে যাও। শিবু হাজরা বলবে শেখ শাহজাহানের কাছে যাও। এই করতে করতে আমাদের কথা শেষ।' 


সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর দাবিও তুলেছিলেন কেউ কেউ। এক অভিযোগকারিণী বলেন, ' আমি চাইছি, আমাদের পুলিশ প্রশাসন ব্য়বস্থা যেভাবে আমাদের পাশে নেই, এখন চাইছি, কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাক।'


সন্দেশখালির বাসিন্দাদের এই বক্তব্য়কে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, এই কারণেই কি পুলিশের কাছে বয়ান না দিয়ে, ম্য়াজিস্ট্রেটের কাছে বয়ান দিয়েছেন নির্যাতিতা?


এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আবার পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, এমনটা বলা হচ্ছে সন্দেশখালির সাধারণ মানুষ নাকি ভয় পাচ্ছিলেন অভিযোগ জানাতে। তাহলে কি সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দার, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ এরাও ভয় পাচ্ছিলেন ? তাহলে কি এটা সত্যিই অভিযোগ ? নাকি সাজানো ?


এই আবহেই শনিবার বারাসাত রেঞ্জের ডিআইজি সুমিত কুমারকে সরানো হয়েছে। এই রেঞ্জের নতুন ডিআইজি করা হয়েছে ভাস্কর মুখোপাধ্যায়কে।  সন্দেশখালিকাণ্ডের জেরেই এই বদলি কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। যদিও, নবান্ন সূত্রে দাবি, এটা রুটিন বদলি।