সমীরণ পাল, শিবাশিস মৌলিক, অনির্বাণ বিশ্বাস: বিজেপি-র সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করা দুঃস্বপ্নেরও অতীত, শনিবার ডিএ মঞ্চে (DA Protests) কংগ্রেস (Congress) এবং বিজেপি নেতাদের উপস্থিত থাকা নিয়ে মন্তব্য প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury)। দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে পাঠানো হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত ভাবে গিয়েছিলেন, মন্তব্য কৌস্তভ বাগচীর (Koustav Bagchi)।


কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস এবং বিজেপি। তা নিয়ে রাজনৈতিক পারদ চরমে। সেই আবহে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরে, বাংলায় বিজেপি-র সঙ্গে একমঞ্চে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস নেতা কৌস্তভকে। তা নিয়ে বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেস কার্যতই দ্বিধাবিভক্ত। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।


ডিএ আন্দোলনের মঞ্চে যুযুধান দুই দলের নেতাদের একসঙ্গে থাকা নিয়ে জোর বিতর্ক দানা বেধেছে, যাকে দুঃস্বপ্ন আখ্যা দিচ্ছেন খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরই। তাঁর বক্তব্য, "ডিএ আন্দোলনকে আমরা নৈতিক ভাবে সমর্থন করি। পশ্চিমবঙ্গে কেন, সারা ভারতে কংগ্রেস দল কোথাও বিজেপি-র সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করবে, এটা দুঃস্বপ্নেরও অতীত।"


আরও পড়ুন: Panchayat Elections 2023: পঞ্চায়েতেও সাগরদিঘির পুনরাবৃত্তি! ফের একজোট বাম-কংগ্রেস, কেষ্টহীন বীরভূমে যৌথ ডেপুটেশন


শনিবার বকেয়া ডিএ-র দাবিতে মহামিছিলের পর হাজরা মোড়ে সভা করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে সিপিএম নেতাদের পাশাপাশি 
উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান, অসিত মিত্র, কৌস্তভরা। কৌস্তভ যখন মঞ্চে বক্তৃতা করছেন, সেই সময় সভা চত্বরে পৌঁছে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কংগ্রেস নেতার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর তিনি মঞ্চে ওঠেন। কৌস্তভের হাত থেকে মাইক নিতেই দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতাকে। 


সেই নিয়ে রবিবার বিস্ফোরক দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।  তাঁর কথায়, "যে দু'জন নেতার কথা বলছেন, তারা কেন গিয়েছেন, কিভাবে গেছেন, সেটা তাঁদের সরাসরি জিজ্ঞেস করলে সব থেকে ভাল উত্তর পাওয়া যাবে। কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে আমি যৌথ মঞ্চ শেয়ার করার জন্য বলিনি। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে যেতেই পারেন। তাঁরা কিভাবে গিয়েছেন, সেখানে তাঁরা জানতেন কি জানতেন না, সেটা আমার জানা নেই।"


অধীরের এমন মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কৌস্তভও। তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে ওদের বিভিন্ন মামলা নিয়ে সম্পর্ক আছে। ব্যক্তিগত ভাবে গিয়েছি। দল হিসেবে কাউকে আমন্ত্রণ করেনি। অধীরদাকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। শুভেনদু আসার আগেই মঞ্চ ছেড়ে দিয়েছিলাম।" 
ফেসবুকে এই পোস্ট করে শনিবার ডিএ মঞ্চে যাওয়া নিয়ে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন কৌস্তভ। জানান, বিজেপি-র সঙ্গে মঞ্চ কংগ্রেস শেয়ার করতে পারে না। কিন্তু মঞ্চটি তো বিজেপি বা কংগ্রেসের নয়, সরকারি কর্মী এবং বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের। 


আর এক জায়গায় কৌস্তভ লেখেন, "বিজেপি যেখানে পা রাখবে, সেখানে যদি কংগ্রেস পা রাখতে না পারে, তাহলে তো সংসদ বা বিধানসভায় যেখানে কংগ্রেস বা বিজেপি দুই দলের বিধায়কই থাকেন, সেখানে কংগ্রেসের পা রাখাই উচিত নয়।" কৌস্তভ লিখেছেন, "গান্ধীজি আমাদের এমন শিক্ষা দেন না। উনি নাথুরামের সঙ্গেও আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। শ্যামাপ্রসাদকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভায় ঢুকিয়েছিলেন কে? গান্ধীজি।"


শেষে কংগ্রেস নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, ডিএ নিয়ে আন্দোলন করতে শুভেনদু অধিকারী চলে গেলেন। কংগ্রেস গেল না, সেটা কি শোভন হত? এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি আব্দুল মান্নান। নিয়োগ দুর্নীতিই হোক বা বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন, মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানাতে দেখা গিয়েছে, সমস্ত বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের। এবার বকেয়া ডিএ-র দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে করা সভার মঞ্চে উপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়ে গেল বিতর্ক।