কলকাতা: মাঝরাতে বাড়িতে পুলিশি অভিযান এবং গ্রেফতারি। তার পর তীব্র টানাপোড়েনের মধ্যে দিনের শেষে জামিন। কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীকে (Koustav Bagchi) ঘিরে কম টানাপোড়েন হল না। তবে কৌস্তভের এই লড়াইয়ে তাঁর মা-বাবার পাশাপাশি আগাগোড়া পাশে থেকেছেন তাঁর প্রেমিক প্রীতি কর। তবে কৌস্তভকে ব্যক্তিগত আক্রমণে না যাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)।

  


আপাতত কৌস্তভের যাবতীয় মনোযোগ রাজনীতিতেই

কৌস্তভের প্রেমিকা প্রীতির বাড়ি হুগলির শ্রীরামপুরে। কৌস্তভের মতো তিনিও পেশায় হাইকোর্টের আইনজীবী। একটি বিতর্ক-সভায় কৌস্তভের বক্তব্য শুনে ভাল লাগা। তার পর, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। সেখান থেকে প্রেম। আজ দু'জনের বোঝাপড়া এতটাই মজবুত, যে কৌস্তভ যখন জামিন পেয়ে ন্য়াড়া হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন নাপিত জোগাড় করে দেন প্রীতিই। শুধু তাই নয়, ন্যাড়া কৌস্তভের সঙ্গে ছাদনাতলাতেও যেতে রাজি তিনি।

যদিও আপাতত কৌস্তভের যাবতীয় মনোযোগ রাজনীতিতেই। লক্ষ্য় একটাই, তৃণমূল সরকারকে উপড়ে ফেলা। অধীরের উদ্দেশে মুখ্য়মন্ত্রীর ব্যক্তিগত আক্রমণের পর পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছিলেন কৌস্তভ। তার পরই অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। মাঝরাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে, তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


সেই নিয়ে শনিবার রাজ্য় রাজনীতি উত্তাল হয়েছিল। মঙ্গলবারও সেই আঁচ টের পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার ফের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন অধীর। তিনি বলেন, "দিদি আমি অধীর চৌধুরী বলছি। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে, আপনার পুলিশ আছে, সিআইডি আছে, আপনার সরকার আছে, আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করান। কোর্ট সাজা দিলে বুঝব আপনার হিম্মত আছে।"


আরও পড়ুন: Anubrata Mandal : অনুব্রত শুনানিতে টানটান নাটক, রাতেই বাড়িতে সশরীরে হাজিরা দিতে নির্দেশ বিচারপতির

তবে অধীর ফের একবার এটাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে ব্য়ক্তিগত আক্রমণকে তিনি সমর্থন করেন না। কৌস্তভকেও সেই পথে আর না এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অধীরের বক্তব্য, "আমরা যতই রাজনীতি করি, কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করাকে সমর্থন করে না...দুর্ভাগ্য হল মুখ্যমন্ত্রী সেই নোংরা রাজনীতি করতে পারেন, যদি মনে করেন তিনি একাই করতে পারেন, তাহলে ভুল করছেন। কৌস্তভ দৃঢ়তা দেখিয়ে মমতাকে বলার চেষ্টা করেছে, আপনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন না, আপনি স্বচ্ছ, আর বাকিরা খারাপ। সম্মান এক তরফা হয়না, এটা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বোঝা উচিত। কৌস্তভকে বলেছি, তুমি আমার ভাইয়ের মতো, এসব নিয়ে বেশি কথা বলা সমীচীন নয়। যা লড়াই হবে রাজনৈতিক হবে।"

বন্ধ হোক 'ভাষা-সন্ত্রাস', একযোগে দাবি বাম-বিজেপি-রও। সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী নিজে শুরু করেছেন ভাষা সন্ত্রাস। কেন এই ভাবে কথা বলেন?" বিজেপি-র সজল ঘোষ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, সেটা ভাষা সন্ত্রাস। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।"


এই তরজার মধ্যেই নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন কৌস্তভ। কৌস্তভের দাবি, তাঁর বাড়িতে হামলা হতে পারে বলে জানন এক তৃণমূল কর্মী।
এর পরই, রবিবার রাতে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনারকে ইমেল করে নিরাপত্তা চান কৌস্তভ। পরে আরও একটি ই-মেল করে,
রাজ্যপাল, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর, স্বরাষ্ট্র সচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার এবং টিটাগড় থানার কাছে ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনের দাবি করেছেন কৌস্তভ।


বন্ধ হোক 'ভাষা-সন্ত্রাস', একযোগে দাবি বাম-বিজেপি-রও

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে দাবি,কৌস্তভের ই-মেলের ভিত্তিতে টিটাগড় থানার পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়। বাড়িতে হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হলেও, কিছু হয়নি। আবার কিছু জানানো হলে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।