মোহন দাস ও কমলকৃষ্ণ দে, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান: প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাণ্ডবের পর অবশেষে পূর্ব বর্ধমানের বুলচন্দ্রপুরে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা গেল মত্ত হাতিকে। গতকাল পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল থেকে দলছুট দাঁতালটি ঢুকে পড়ে হুগলির আরামবাগে। দিনভর সেখানে তাণ্ডব চালানোর পর আজ সকালে পাশের জেলা পূর্ব বর্ধমানে ঢুকেও দাপাদাপি করে সে। হাতির হামলায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি আরামবাগের দুই বাসিন্দা।


দাঁতালের উৎপাত:
দুই জেলায় টানা দাপিয়ে বেরিয়েছে দাঁতাল। কখনও লোকালয়ে তাণ্ডব করেছে। কখনও চাষের জমি ছাড়খাড় করেছে। দাঁতালের আতঙ্কে কার্যত দিশেহারা হয়েছেন বাসিন্দারা। আতঙ্কে ছুটে পালিয়েছেন সকলে। সাইকেলে বা মোটরবাইকে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছেন অনেকে। অনেকসময়েই সামনে যা পেয়েছে উপরে দিয়েছে ওই দাঁতাল। ছাড় পায়নি মানুষও। তাঁদের উপরেও হামলা করেছে ওই দাঁতাল। কাউকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারা হয়েছে। কাউকে আবার দাঁত দিয়ে বুকে আঘাত করেছে ওই দাঁতাল।    


শনিবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের একাংশে এভাবেই দাপিয়ে বেড়ায় ওই হাতি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর, পূর্ব বর্ধমানের বুলচন্দ্রপুরে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা হল দলছুট দাঁতালটিকে। বনদফতর সূত্রে খবর, শনিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল থেকে হুগলির আরামবাগে ঢুকে পড়ে হাতিটি। চাষের জমি থেকে লোকালয়, বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব চালায়। 


এক প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যুৎ পল্লব বলেন, 'হাতিটি তাণ্ডব চালাচ্ছিল। হঠাৎ সামনে পড়ে যান এলাকার একজন। তখনই শুঁড়ে করে আছাড় মারে।' হাতির আক্রমণে মারাত্মকভাবে জখম দুই ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। হাতি তাড়াতে এসে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যায় হল্লা পার্টির এক সদস্যের। বনদফতর সূত্রে খবর, হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে জঙ্গলে ফেরার বদলে হুগলি পেরিয়ে রবিবার ভোরে পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহিতে ঢুকে পড়ে হাতিটি। সেই খবর পেয়েই মাইকে ঘোষণা করে এলাকার মানুষজনকে সতর্ক করতে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। শেষপর্যন্ত রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ মাধবডিহির বুলচন্দ্রপুরে ২টি ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে দাঁতালকে কাবু করেন বনদফতরের কর্মীরা। পূর্ব বর্ধমানের বিভাগীয় বন আধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, 'আরামবাগ থেকে গড়বেতার জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু হাতিটি পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহিতে ঢুকে পড়ে।'


বারবার লোকালয়ে হাতি:
কেন বারবার লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতি? মানুষ থেকে ফসল, এত ক্ষয়ক্ষতির দায় কার? এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে বন দফতরের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে তারা। বন দফতর সূত্রে খবর, দাঁতালের তাণ্ডবে এলাকায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: ক্রেতা সেজে উদ্ধার চোরাই জিনিস, পুলিশের হাতে গ্রেফতার ৩