উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও রুমা পাল, ধূপগুড়ি: একপেশে লড়াই নয়, বরং 'কাঁটে কা টক্কর' যার শেষে বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। বিজেপির তাপসী রায়কে সামান্য ব্যবধানে হারিয়ে দিলেন শাসকদলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। চব্বিশের সাধারণ নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গের এমন আসনে জয় নিঃসন্দেহে তৃণমূলের মনোবল আরও শক্ত করবে, বিশ্বাস রাজনৈতিক মহলের।
সহজ নয়...
কথায় বলে, 'মর্নিং শোজ দ্য ডে'। এক্ষেত্রেও কি তাই হয়েছিল? শুক্রবার সকালে যখন পোস্টাল ব্যালট গণনা শুরু হয়, তখন সামান্য ব্য়বধানে এগিয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী। উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রত্যয়ী তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, তার আগেই এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত, এবার ধূপগুড়ি 'পুনরুদ্ধার' করবেই তৃণমূল। কিন্তু একটু পরে ইভিএমে ভোটগণনা শুরু হতেই বদলে যায় ছবিটা। প্রথম রাউন্ডের শেষে ফলাফল? এগিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী। দ্বিতীয় রাউন্ডে বিজেপির তাপসী রায় 'লিড' ধরে রাখতে পারলেও তৃণমূলের সঙ্গে ব্যবধান কমে যায়। কিন্তু জয়ের উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন থেকেই। অন্য দিকে, গৌতম দেবের বক্তব্য, তাঁরাই জিতছেন। টানটান উত্তেজনার পর চতুর্থ রাউন্ডে আরও এক দফা চমক। এবার 'লিড' নিলেন তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়। ষষ্ঠ রাউন্ডে সেই ব্যবধান আরও বাড়লেও সপ্তম রাউন্ডে ফের লড়াইয়ে ফেরেন বিজেপির তাপসী। ব্য়বধান কমে দুই প্রার্থীর। যদিও বিজেপির তখনও আশা ছিল, কিছু হিসেব তাদের আশা অনুযায়ী হলে জয় অসম্ভব নয়। তাদের তরফে বলা হয়েছিল, 'ধূপগুড়ি টাউন 'লিড'দিয়েছে। সাঁকোয়াঝোড়া সমান-সমান দিয়েছে। গাদং-১-এর ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। সেখানে ফলাফল ভাল হলে গাদং টু-তে আমরা লিড নিতে পারি। তবে আমরা শেষ দেখে ছাড়ব।' অন্য দিকে গৌতম দেবের প্রত্যয়ী পূর্বাভাস, 'বলেছিলাম, বেলা যত বাড়বে, ব্যবধান মেক আপ করে এগিয়ে যাব। তাই হচ্ছে। গণনা শেষ হলে দেখা যাবে, কমফর্টেবল মার্জিনে জিতে যাব।' বাস্তবে হলও তাই। ৪ হাজারেরও বেশি ভোটে তৃণমূল হারাল বিজেপিকে।
কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী...
রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ,পঞ্চায়েত ভোটের পর ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থীর 'পারফরম্যান্সের' দিকেও নজর ছিল অনেকের। কিন্তু তিনি, ঈশ্বরচন্দ্র রায়, সে ভাবে কোনও দাগই কাটতে পারেননি। সে অর্থে দেখতে গেলে এই উপনির্বাচনের লড়াইটা তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্য়েই আটকে রইল। বিষয়টি নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর যুক্তি, 'কংগ্রেস-সিপিএম উভয়েরই সংগঠন ওখানে দুর্বল...আমরা কখনওই বলিনি জিতব। ধূপগুড়ি নিয়ে কোনও আশার কথা বলিনি।'
জোড়াফুলে ধূপগুড়ি...
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে যে গেরুয়া-দাপট দেখা গিয়েছিল, তার বড় অংশ ছিল উত্তরবঙ্গে। বস্তুত, সেই সময়ই জলপাইগুড়ি লোকসভা গেরুয়া শিবিরের দখলে চলে যায়। এই লোকসভার ৭টি বিধানসভার মধ্যে একটি হল ধূপগুড়ি। এর ২ বছর পরে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলেরই মিতালি রায়কে হারিয়ে ধূপগুড়ি বিধানসভা দখল করেন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতে উপনির্বাচন। কিন্তু উত্তরবঙ্গের সংগঠন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকা সত্ত্বেও এই আসন কেন ধরে রাখতে পারল না বিজেপি? তাদের ব্যাখ্যা, বারোঘড়িয়া অঞ্চল থেকে যে পরিমাণ আশা করা হয়েছিল, তার থেকে অনেক কম ভোট এসেছে। কেন? কিছু সংখ্যালঘু এলাকা রয়েছে সেখানে, গণনা চলাকালীন সে কথা মেনে নিলেন এক নেতা। তবে একই সঙ্গে জানালেন, শহরাঞ্চলে তাঁদের 'গেন'-ও হয়েছে। আখেরে অবশ্য লাভ হল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জোড়াফুল যে ভোটবাক্সে লাভের ফল তুলতে পেরেছে তার কারণ ধূপগুড়িকে মহকুমা করার আশ্বাস। ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, মিতালি রায়ের শেষ মুহূর্তে তৃণমূলত্যাগও একটা ফ্যাক্টর হয়ে থাকতে পারে। সব মিলিয়ে ধূপগুড়ি হাতছাড়া বিজেপির যা কিনা চব্বিশের ভোটের আগে নিশ্চিত ভাবেই বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে তৃণমূলকে, মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।