আবির দত্ত, সুদীপ্ত আচার্য, হিন্দোল দে, কলকাতা: বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আরও তীব্র হচ্ছে আন্দোলন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আংশিক সময়ের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত, সরকারি দফতর, স্কুল, হাসপাতাল, আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সমর্থন করেছে সিপিএম ও বিজেপি। 


শুক্রবার, শনিবার, রবিবারের পরে সোমবারও। বকেয়া ডিএ ও দুর্নীতিহীন নিয়োগের দাবিতে চতুর্থ দিনে পড়েছে সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ২৮টি সংগঠনের যৌথ আন্দোলন। মঞ্চ বেঁধে স্লোগান দিয়ে চলছে আন্দোলন। স্লোগানে নেতা-মন্ত্রীর বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করা হয়েছে।  কী বলা হচ্ছে স্লোগানে?  'ওই নেতা-মন্ত্রীর বেতন বাড়ে, বসছি মোরা পথের ধারে, লজ্জা লাগা দরকার। ভুল করেছে, ভুল করেছে আমার ডিএ সরকার। ওই নেতা-মন্ত্রীর বেতন বাড়ে, বসছি মোরা পথের ধারে, লজ্জা লাগা দরকার। চুরি করেছে, চুরি করেছে, আমার ডিএ সরকার।' 


কর্মবিরতির ডাক:
ধর্না-অবস্থানের পাশাপাশি, আন্দোলন আরও তীব্রতর করার পথে হাঁটছে তারা। বুধবার দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। কোথায় কোথায় কর্মবিরতি? সরকারি দফতর, স্কুল, হাসপাতাল, আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, 'যদি সরকার এই দুটো দাবিকে মান্যতা দিয়ে আমাদের এখান থেকে উঠতে সাহায্য না করে, তাহলে যতদিন দাবি না মানবে, এই আন্দোলন তীব্রতর হবে। বুধবার বেলা ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সমস্ত সরকারি দফতর, স্কুল, হাসপাতাল সমস্ত জায়গায় কর্মবিরতি পালন হবে। এই সমস্ত বিভাগ, কোর্ট-সহ বেলা ২-৪টে পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতি চলবে। এতেও কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন চলবে।'


শুরু তরজা:
স্কুল ও হাসপাতালে কর্মবিরতি চললে তো সমস্যায় পড়বে পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। এই প্রসঙ্গ তুলে আন্দোলনকারীদের নিশানা করেছে তৃণমূল। আন্দোলনকারী এবং সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস জানান, জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে, তবে অন্যান্য বিভাগে নার্স-চিকিৎসকরা যোগ দেবেন। তার আগেই আউটডোর বন্ধ হযে যাবে।


বকেয়া DA'র দাবিতে স্কুল-হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাকে সমর্থন জানিয়েছে সিপিএম ও বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আগেও আমি নব মহাকরণে মঞ্চ থেকে বলেছিলাম, আদালতে যা হওয়ার তা তো হচ্ছে, কিন্তু আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। পৃথকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দুই ঘণ্টার জন্য করছে শুরু হোক, তবে আরও বড় আকারে কিছু হলে তাতেও সমর্থন রয়েছে।'


ডিএ-এর ফারাক:
পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী, কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের DA-র ফারাক ছিল ৩৪ শতাংশ। ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী সেই ব্যবধান বেড়ে হয়েছেন ৩৫ শতাংশ। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে ২৮টি সংগঠন। সেই সঙ্গে চড়ছে রাজনীতির পারদও। প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের সিপিএম কর্মী বলে তকমা দিয়েছেন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফের সেই অবস্থানেই অনড় থাকার কথা বলেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরা কেউ কর্মবিরতিতে যাবে না। কোনও সরকারি কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যাবে না। সিপিএমের কিছু লোক এটা করছে। সরকার ইতিমধ্যেই ডিএ (DA) দিয়েছে এবং সেটাই সুপ্রিম কোর্টেও জানানো হয়েছে । আর যখন কোর্টে বিষয়টা রয়েছে তাহলে এসব করার কী আছে? তাহলে কোর্ট কে ভরসা রাখছে না। এগুলো হচ্ছে সরকারকে ডিস্টার্ব করার একটা চক্রান্ত।' মন্ত্রীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরাও।


হাইকোর্ট হয়ে এখন DA-মামলা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ১৫ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা।


আরও পড়ুন: আজ প্রস্তুতি যাচাই! পাস করলেই চালু নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রো