অনির্বাণ বিশ্বাস, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও আবির দত্ত, কলকাতা: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (Aliah University) উপাচার্যের ঘরে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও খুনের হুমকি দেওয়ায় গ্রেফতার অভিযুক্ত ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল (Giyasuddin Mondal )। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। কিন্তু কে এই গিয়াসউদ্দিন? আর কী কী অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে?
ভাইরাল ভিডিওর বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে উপাচার্যকে অকথ্য, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি। সম্প্রচারের অযোগ্য ভাষায় গালাগালি দেওয়ার পাশাপাশি, বাদ যায়নি তুই-তোকারি..... খুনের হুমকি...। শিক্ষাঙ্গনে যে ছাত্রনেতার নজিরবিহীন তাণ্ডব ঘিরে তোলপাড় গোটা রাজ্য, তাঁর নাম গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল। TMCP-র প্রাক্তন ইউনিট প্রেসিডেন্ট।
শুক্রবার যাঁর মুখের ভাষা ছিল অকথ্য, অশ্রাব্য, সম্প্রচারের অযোগ্য, এদিন সেই ঘটনার জন্য অনুশোচনা দূর অস্ত, গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের দাবিতে অনড় ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। ঘটনার দু’দিন পর, রবিবার নিউটাউন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে টেকনোসিটি থানার পুলিশ।
কিন্তু কে এই গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল?
অভিযুক্ত ছাত্রনেতার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানে। ২০১৩ সালে তিনি ভর্তি হন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় ছিল, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০১৭ সালে গ্রেফতার হন গিয়াসউদ্দিন। জেল খাটেন ১৯ দিন। তত্কালীন উপাচার্য আবু তালেব খানকে হেনস্থা, বিক্ষোভ দেখিয়ে টানা আটকে রাখা, ২ রেজিস্ট্রারকে মারধর, ক্যাম্পাস ভাঙচুর, পুলিশকে হেনস্থা সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড হন গিয়াসউদ্দিন সহ ৫ জন। ২০১৯ সালে ওই সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে থেকে বলা হয় - চূড়ান্ত বর্ষের বহিষ্কৃত ছাত্ররা কোনওভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। ফি দেওয়া, ফর্ম ফিলআপ, অ্যাডমিট সংগ্রহ, পরীক্ষায় বসা, মার্কশিট সংগ্রহ করার কাজ ছাড়া তাঁদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
কিন্তু তারপরেও কী করে গিয়াসউদ্দিন ক্যম্পাসে ঢুকলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি ইউনিটই...নিউটাউনের মহম্মদপুরে একটি মেসে থাকতেন গিয়াসউদ্দিন। সেখান থেকেই এদিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
কী কী অভিযোগ রয়েছে?
পুলিশ জানিয়েছে, খুনের চেষ্টা, অপরাধমূল ষড়যন্ত্র, সরকারি কর্মীকে বাধা, সংগঠিত অপরাধ, চুরি সহ ১১টি ধারায় গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারা রয়েছে। জিএস ওয়াদিল আলম, "এরা ছাত্র নয়, গুন্ডা মাওয়ালি। শাসক দের দলের নেতা মন্ত্রীর হাত আছে। অক্সিজেন জোগায় জিম নওয়াজ।"
গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যায়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারাও। ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে নিউটাউন ক্যাম্পাসে মন্ত্রী গোলাম রব্বানির সঙ্গে দেখা করতে যান পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের কয়েকজন গবেষক ও পড়ুয়া। অভিযোগ সেখানে গিয়াসউদ্দিন মারধর করেন ছাত্রদের।
শুক্রবারের ঘটনার প্রতিবাদে এদিন পার্ক সার্কাস ক্যাম্পারে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। বাকি অভিযুক্তদেরও গ্রেফতারের দাবি করেন তাঁরা। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউটাউন ও পার্ক সার্কাসের পড়ুয়ারা।