অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার: স্কুলের বারান্দায় কোনও ছাউনি নেই। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, কড়া রোদ হোক বা বৃষ্টি, যে কোনও পরিস্থিতিতেই ওই বারান্দায় বসেই মিড-ডে মিল খেতে হয় পড়ুয়াদের। অনেকসময় বৃষ্টিতে ভিজেই খাওয়া সারতে হয় খুদেদের। এমনই ছবি আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar)  ২ নম্বর ব্লকের মধ্য-পারোকাটা নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বারবার আবেদন জানিয়েও স্কুলে মেরামতির কাজ না হওয়ায় অভিভাবকদের থেকে চাঁদা তুলে ছাদ মেরামতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।  


নাজেহাল পড়ুয়ারা:
আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লকের মধ্য-পারোকাটা নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় (Primary School)। প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ১৫৬। স্কুলের ৫টা ঘরের মধ্যে একটা ঘর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাকি ৪টে ঘরে ঠাসাঠাসি করে বসতে হয় পড়ুয়াদের। বছর দেড়েক আগে বিধানসভা ভোটের সময়, ঝড়ে উড়ে যায় স্কুলের বারান্দার টিনের ছাউনি। স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে খোলা আকাশের নীচে বসে মিড ডে মিল খায় বাচ্চারা। বর্ষায় ভিজেই করতে হয় পড়াশোনা। 


ক্ষুব্ধ অভিভাবক, উদ্বিগ্ন শিক্ষক:
বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এক অভিভাবক কাজল সরকার। তিনি বলেন, 'স্কুলের পরিস্থিতি খুব খারাপ। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ছাদ নেই প্রায় দেড়বছর। বারবার বলা হয়েছে।' স্কুলের পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল উদ্বিগ্ন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দেবনাথ। তিনি বলেন, '৭৫ ফুট লম্বা বারান্দার প্রায় ৭০ ফুট চাল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। একটা রুমের বেশিরভাগ অংশ ভাঙা। ফলে ২টি ক্লাসের পড়ুয়াদের একটা ক্লাসে বসাতে হচ্ছে। মিড ডে মিল খাওয়ানোর জায়গা নেই। বৃষ্টি হলে সমস্যা হয়। পানীয় জলও ভাল নয়।'


গোটা ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। আলিপুরদুয়ার জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান পরিতোষ বর্মণ বলেন, 'জেলায় ১৫টা স্কুল মেরামত যোগ্য। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। ১০০ দিনের টাকাও দিচ্ছে না ফলে সরকারি ফান্ড নেই।' স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং তৃণমূল নেতা নারায়ণ তালুকদার বলেন, 'সরকারের ফান্ডের অভাব রয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। জিএসটি কেটে নিচ্ছে। কষ্ট করে রাজ্য খরচ চালাচ্ছে। এটাও করে দেবে।' এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিজেপি। আলিপুরদুয়ারের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মিঠু দাস বলেন, 'রাজ্য সরকার আর্থিকভাবে দেউলিয়া। পুরোপুরি কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। এটা অমানবিক পরিস্থিতি। জেলা প্রশাসন বা মুখ্যমন্ত্রীর কি ক্ষমতা নেই টিনের শেড বানাবার?'


আরও পড়ুন: দীর্ঘদিনের লড়াই শেষ, আজ স্কুলে যোগ ববিতার