অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার: বনদফতরের জারি করা বিশাল অঙ্কের ক্যাম্পিং-ফি-এর গেড়োয় অনিশ্চিত জয়ন্তির প্রকৃতি-পাঠ শিবির। যারফলে, দীর্ঘ প্রায় চার দশকের ঐতিহ্যমন্ডিত এই শিবির না করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল আলিপুরদুয়ারের প্রকৃতিপ্রেমী দুই সংগঠন 'নেচার ক্লাব' ও 'নন্দাদেবী ফাউন্ডেশন'। 


সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন দুই সংগঠনের কর্তারা। জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনের প্রকৃতি পাঠ শিবির আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিল এই দুই সংগঠন। সেই লক্ষ্য নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের পক্ষ থেকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত জয়ন্তি নদীর বক্ষে তাদের ৪৩ তম প্রকৃতি পাঠ শিবিরের অনুমতির জন্য লিখিত আবেদনও করা হয়েছিল। 


একইভাবে আগষ্ট মাসে আবেদন জানিয়েছিল অপর সংগঠন নন্দাদেবী ফাউন্ডেশনও। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ নভেম্বর বনদফতর এই দুই সংগঠনকে জয়ন্তি নদী বক্ষের পরিবর্তে জয়ন্তি রেঞ্জ অফিসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় শর্ত-সাপেক্ষে শিবিরের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। 


আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে এই প্রথম ক্যাম্পিং ফি হিসেবে প্রতিজনের জন্য ১০০ টাকা, প্রবেশমূল্য প্রতিজনের জন্য ১৫০ টাকা এবং প্রতি গাড়ির জন্য ৪৮০ টাকা ধার্য্য থাকবে বলে জানানো হয়। যা এর পূর্বে কখনই দিতে হয়নি বলে দাবী দুই সংগঠনের।  যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অর্থ মকুবের জন্যও আবেদন করা হয় নেচার ক্লাবের পক্ষ থেকে। 


অভিযোগ, এরপরই বনদফতরের তরফে ১৮ ডিসেম্বর তারিখের একটি চিঠিতে ২২ ডিসেম্বর জানানো হয় জয়ন্তি রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন এলাকার পরিবর্তে দুই প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনের আবেদনে সাড়া দিয়ে নদী বক্ষেই শিবিরের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধার্য্য করা কিছুটা ছাড় দেওয়া মূল্য তাদের দিতেই হবে। অভিযোগ, ১০০ জন ক্যাম্পার্স নিয়ে ৬ দিনের জন্য  হলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ৪২০ টাকা। যা এই দুই সংগঠনের কাছে দুশ্চিন্তার সামিল।  বনদপ্তরের এহেন খেয়ালিপনায় তারা এবছড়ের প্রকৃতিপাঠ শিবির থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন বলে জানান তারা। 


উল্লেখ্য, ডুয়ার্সের প্রকৃতি মাঝে, প্রকৃতিকে জানতে ও শিখতে দীর্ঘ প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধড়ে প্রকৃতি পাঠের ব্যবস্থা করে থাকেন আলিপুরদুয়ারের একাধিক সামাজিক সংগঠন। তেমনি প্রতি বছড়ের ডিসেম্বর ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতর ৬ দিনের এই শিবির করে আসছে আলিপুরদুয়ারের দুটি সংগঠন । পাহাড়, জঙ্গল ও নদী বেষ্ঠিত এলাকায় তারা তাবু বসিয়ে এই শিবির করে থাকেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলাসহ কলকাতার শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে এই শিবিরে। 


শুধু প্রকৃতি পাঠই নয়, পাখির পরিচিতি এবং পর্বতারোহণ একটি বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ওঠে এই শিবিরে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে ধারনা এবং প্রশিক্ষন দেওয়া হয় এই শিবিরগুলোতে। প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারনা দেওয়াই শুধু নয়, পাহাড়ি দূর্গম ঝুঁকিপূর্ণ পথ পেরিয়ে যাবার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকৃতিকে নিয়ে সচেতনতার একটি বড়ো অংশই থাকে এই শিবিরের মূল পাঠে। 


অপরদিকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েও এবছরের প্রকৃতিপাঠ শিবিরে অংশ নিতে না পারার আক্ষেপে হতাশ ক্যাম্পারেরাও। 


হঠাৎ করে বনদফতরের এমন নির্দেশে দীর্ঘদিনের প্রকৃতিপাঠ শিবির বন্ধ হওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না আলিপুরদুয়ারের প্রাপ্তন এবং বর্তমান বিধায়কদ্বয়। আলিপুরদুয়ারের প্রাপ্তন আরএসপি বিধায়ক এবং নেচার ক্লাবের উপদেষ্টা নির্মল দাস বেজায় ক্ষুদ্ধ।


যদিও বর্তমান বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, দীর্ঘ দিনের এই শিবির চলছে। হঠাৎ করে একটা বড়ো পরিমান অর্থ দেবার সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন যায়গা থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা এমন প্রকৃতি পাঠের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হোক আমরা চাই না। একটা নূন্যতম ফি থাকতেই পারে। 


এই বিষয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প পূর্ব বিভাগের উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাশীষ শর্মার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সমস্তই আমাদের গাইড লাইন এবং নির্দেশের উপর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাদের তরফে ছাড় দেবার আবেদন করা হয়েছিল। সেখানেও এন্ট্রি এবং ভেইকেল বাবদ নির্দেশ অনুসারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। শিবিরের স্থান তাদের আবেদনে সাড়া দিয়েই পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়েছে। সবই আমাদের গাইড লাইন অনুসারে হচ্ছে। এরপরেও যদি সমস্যা থেকে থাকে তবে লিখিত আবেদন জানালে আমরা অবশ্যই তা উর্দ্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাবো।