সন্দীপ সরকার, সুদীপ্ত আচার্য, দীপক ঘোষ, কলকাতা: এবার ডাক্তারির সংরক্ষিত আসনে ভর্তিতে ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার অভিযোগ! তফশিলি উপজাতি সংরক্ষিত আসনে ভুয়ো সার্টিফিকেট জমার অভিযোগ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে! ৪৫ জনের নামের তালিকা স্বাস্থ্যভবনকে দিল আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। স্বাস্থ্য দফতরকে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ করতে বলল আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। ৪৫ জনের নাম-সহ অভিযোগ তোলে রাজ্য তফশিলি উপজাতি কল্যাণ সমিতির। অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য দফতরকে তদন্ত করতে বলল আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে, জানাল স্বাস্থ্য দফতর। 

যখন এসএসসি নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য, তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ডাক্তারির সংরক্ষিত আসনে ভর্তিতে ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার অভিযোগ। এ কথা সবারই জানা যে, কেবল চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয়, পড়াশোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গাতেই তফশিলি জাতি উপজাতির জন্য আসন সংরক্ষিত থাকে। থাকে বিভিন্ন ছাড় ও সুযোগ সুবিধাও। সেই সুযোগ সুবিধা পেতেই এই ধরণের ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার চেষ্টা রা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ১ জন বা ২ জন নয়, এই অভিযোগ উঠেছে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে। এর আগেও, ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে মেডিক্যাল নিট পরীক্ষায় ভর্তি হওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। 

জাল ওবিসি শংসাপত্র বিতর্কের জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এদিকে, সংরক্ষণের শতাংশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল। আর এরই মধ্যে ভুয়ো ST শংসাপত্র দিয়ে মেডিক্যালের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দফতরে। তদন্ত করার আর্জি জানিয়ে স্বাস্থ্যভবনকে চিঠি দিল আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। 

NEET পাস করে ইতিমধ্যেই ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন মেডিক্যাল পড়ুয়ারা। সেই ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও চলছে। আর এর মধ্যেই সামনে এল মারাত্মক অভিযোগ। রাজ্য ST ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, ভুয়ো ST সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন ৪৫ জন। ওই ৪৫ জনের নাম, সিরিয়াল নম্বর, সর্বভারতীয় র‍্যাঙ্ক - সহ তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরে। একই সঙ্গে অভিযোগ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়, মুখ্যসচিব, অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরেও। 

১৭ অগাস্ট এই ৪৫ জনের নামের তালিকা সহ রাজ্য ST ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরে জমা পড়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এমন অনেক পদবি রয়েছে যা ST-র অন্তর্ভুক্তই নয়। আর এই অভিযোগ পাওয়ার পরই তৎপর হয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। ২১ অগাস্ট, রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে দেওয়া চিঠি দেন আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের যুগ্মসচিব। চিঠিতে, অভিযোগের তদন্ত করার আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে একটি অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। ঘটনা জানাজানি হতেই রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। বিরোধীদের পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল।

এখনও MBBS-এর ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। সংরক্ষিত আসনে ভর্তি প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকের উপস্থিতিতেই করা হয়। এই ধরনের অভিযোগ উঠলে খতিয়ে দেখা হবে। খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতীতেও এমন ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার পর বাতিল হয়েছে, পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এবছর MBBS-এর কাউন্সেলিংয়ে ST কোটায় মেধাতালিকাভুক্ত হয়েছেন ২৩২ জন। এর মধ্যে ৪৫ জনেরই সার্টিফিকেট নিয়ে উঠে গেল প্রশ্ন।