কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, বীরভূম: 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহ দেখে ভাল লাগল। আমাকে যারা বাড়ি ছাড়া করতে চান, তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে'। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। 'জমি দখল' বিতর্কের মধ্যেই সোমবার অমর্ত্য় সেনের বাড়িতে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোবেলজয়ীর হাতে তুলে দিলেন জমির সরকারি নথি।
অকপট অমর্ত্য সেন: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কী বললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন? নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কি প্রতিক্রিয়া? এবিপি আনন্দকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে কী জানালেন অমর্ত্য সেন? এদিন তিনি বললেন, 'উনি নিজে জমির ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেছেন, এবং ১৯৪৩-এ কতটা জমি ছিল ইত্যাদি। তা দেখে আমি খুব আশ্চর্য হলাম যে ওনার উৎসাহ আছে। রাজনৈতিক নেতা হলে এই ধরনের উৎসাহ থাকাটাই কাম্য বলে মনে করি, এটা ভালই লাগল। তাহলে কী প্রসঙ্গ উবে গেল? প্রশ্নের উত্তরে নোবেলজয়ী বলছেন, উবে যাওয়ার কারণ নেই, যাঁরা আমাকে বাড়ি ছাড়া করতে চান , তাঁদের উদ্দেশ্য তো আরও বড়, তার মধ্যে কিছু রাজনীতি কিছু সমাজনীতি আছে। রাজনীতির কথা কেন বললেন অমর্ত্য সেন? মতাদর্শের কারণে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের তো মতপার্থক্য থাকেই।
এবিপি আনন্দকে একান্ত সাক্ষাৎকার: এ দিন এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন আরও বলেন, একটা সময়ে তাঁকে শুনতে হয়েছিল তিনি ভারত রত্নই পাননি। এবার তাঁকে শুনতে হয়েছে নোবেলও পাননি তিনি। এ প্রসঙ্গে কী উত্তর দিলেন অধ্যাপক সেন? এ প্রসঙ্গে কার্যত তাচ্ছিল্যের সুরে হেসেই অমর্ত্য় সেনের উত্তর, 'ভারত রত্ন বা নোবেল, কোনও কিছুর ওপরেই আমার লোভ নেই, কাজেই এ ব্যাপারে যার যা খুশি বলতে পারেন,আমার আপত্তি নেই'। তবে এ দিন তিনি আবারও স্বীকার করলেন, বিশ্বভারতীর এ ধরনের আচরণে দুঃখ পেয়েছেন তিনি। বিশ্বভারতীর ছাত্র হওয়ার কারণে যার মাত্রা খানিক বেশি বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। তাহলে আজ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে খুশি তো নোবেলজয়ী সেন? এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন জানান, 'মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন, হিন্দু-মুসলিমদের একতা নিয়ে ভাবছেন এটা তো ভালই। তবে আমি বলছি না তৃণমূলই একমাত্র দল যাঁরা ভাবছেন, আরও অনেকেই রয়েছেন যাঁরা এটা নিয়ে ভাবেন।' উল্লেখ্য, এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ্, বলেছিলেন, উনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আজ সে কথা উঠলে তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, 'হ্যাঁ একথা বলেছি যে উনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য, কিন্তু একথা বলিনি যে উনিই একমাত্র যোগ্য'।
প্রতীচীতে মুখ্যমন্ত্রী: জমি বিতর্কে কদিন ধরেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের! এমনকি বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, নোবেলজয়ীর নোবেল পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্য়ুৎ চক্রবর্তী। এই পরিস্থিতিতে সোমবার শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীতে গিয়ে জমির কাগজ-পত্র তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে নাম না করে মুখ্য়মন্ত্রী কড়া বার্তা দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্যকেও। অমর্ত্য সেনের বাড়িতে বসেই তাঁর জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনার প্রেক্ষাপট: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি, ১৯৪৩ সালে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে, সেই লিজ জমি তাঁর নামে হস্তান্তর করা হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, রেকর্ড ও সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি অমর্ত্য সেনের লিজ পাওয়া জমির মধ্যে থেকে গেছে। এই মর্মে অতিরিক্ত জমি ফেরত চেয়ে একাধিকবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে নোটিস দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই দাবি বারবার উড়িয়ে দিয়েছেন অমর্ত্য সেন। ৪ দিনের জেলা সফরে বেরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।