বোলপুর: বিতর্ক চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। তা নিয়ে দলের নেতা-মন্ত্রীরা বিবৃতি দিলেও, চুপ ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও কিছুই যে তাঁর নজর এড়ায়নি, সোমবারই তার প্রমাণ দেন সোমবার। অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচী’র কাগজপত্র খুঁজে নিয়ে গিয়ে হাজির হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জানিয়ে দেন, কাগজপত্র হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন তিনি। প্রমাণপত্র পেয়েই ছুটে এসেছেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের অপমান বরদাস্ত করবেন না তিনি। হাসিমুখেই মমতার হাত থেকে কাগজপত্র গ্রহণ করেছিলেন অর্থনীতিবিদ। এ বার মমতার এই উদ্যোগ নিয়ে মুখ খুললেন (Visva Bharati)।


অমর্ত্য সেনের বাড়ির কাগজপত্র খুঁজে নিয়ে গিয়ে হাজির হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মমতার এই উদ্যোগ নিয়ে মুখ খুললেন অমর্ত্য। জানালেন, মমতা যে এতটা ভেবেছেন, তাতে একরকম আশ্চর্যই হয়েছেন তিনি। অমর্ত্যর কথায়, “উনি যে এই জমির ইতিহাসচর্চা করেছেন, ১৯৪৩ সালে কতটা জমি ছিল ইত্যাদি নিয়ে যে এতটা উৎসাহ আছে, তাতে আমি খুব আশ্চর্য হলাম। এমন রাজনীতিকের উৎসাহ থাকাটাই কাম্য বলে মনে করি আমি। তাই ভাল লাগল।”


‘প্রতীচী’র কাগজপত্র তুলে দিয়ে অমর্ত্যকে জেড প্লাস পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলেছিলেন অমর্ত্য। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে অমর্ত্য বলেন, “জিনিসটা কী, আমি ঠিক জানি না। তাই জবাব দিতে পারব না।” কিন্তু মমতা কাগজপত্র এনে দিলেও, জমি বিতর্ক কি মিটবে! তেমন মনে করছেন না অমর্ত্য। তাঁর কথায়, “যাঁরা এ নিয়ে বিচলিত, আমাকে বাড়িছাড়া করতে চান, তাঁদের উদ্দেশ্য তো বড়! তার মধ্যে কিছু রাজনীতি আছে, কিছু সমাজনীতি আছে। বাবার কেনা কিছু এবং লিজ নেওয়া  কিছু যে জমি রয়েছে, তাঁদের মতে আমার হয়ত প্রাপ্য নয় সেটা। নানা কারণে সেটা হতে পারে। রাজনীতি তো নিশ্চয়ই হতে পারে।”


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'রাজ্যের টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র', ফের মমতার নিশানায় মোদি সরকার


এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে অমর্ত্য বলেন, “আমাদের মধ্যে তো এই টুকু পার্থক্য অনেক সময়ই থাকে! আমরা যেমন অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ করি, সেটা রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজিও করতেন। হিন্দু-মুসলিম পার্থক্য করি না আমরা। খানিকটা এখানে, খানিকটা ঢাকায় বড় হয়েছি। তখন হিন্দু-মুসলিম কাছাকাছি থাকতেন এবং সুহৃদ্যতা ছিল। যাঁরা প্রধানত রাজনীতি করেন, তাঁদের পক্ষে এটা খুব বাঞ্ছনীয় ব্যবস্থা নয়। তাই অনেকের বাধা দেওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে।”


জমি ঘিরে অমর্ত্যর সঙ্গে লাগাতার সংঘাত বাড়ছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের


জমি বিতর্কে ক'দিন ধরেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
এমনকি বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, নোবেলজয়ীর নোবেল পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্য়ুৎ চক্রবর্তী।  এই পরিস্থিতিতে সোমবার শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীতে গিয়ে জমির কাগজ পত্র তুলে দেন মমতা। সেখানে অমর্ত্যকে তিনি বলেন, "আপনাকে যে ভাবে বলছে, যে কথা বলছে, এতে কিন্তু বাংলার মানুষ সুখী নন। আপনি কখনও এটা নিয়ে মানসিক ভাবে কিছু ভাববেন না। আপনি উন্মুক্ত মনের মানুষ।" বিদ্যুৎ আদৌ বিশ্বভারতীর উপাচার্য হওয়ার যোগ্য কিনা, সেই প্রশ্নও তোলেন মমতা।