ঝিলম করঞ্জাই ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কার্যতই লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা (Dengue Situation)। চরিত্র বদলে ডেঙ্গি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠাতেই এমন পরিস্থিতি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা, সময়ে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে তাঁদের। স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গির দাপট নিয়ে সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। (Kolkata News)


আজ থেকে প্রায় আট দশক আগে ৭২ নম্বর মেসবাড়ির বাসিন্দা শুনিয়েছিলেন, কীভাবে জাপানের উত্তরে সাখালিন দ্বীপে গিয়ে, এক চড়ে মিস্টার নিশিমারা আর তাঁর গালে বসা কালান্তক মশার ভবলীলা সাঙ্গ করেছিলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'মশা' গল্পের কালজয়ী নায়ক ঘনাদার বর্ণনায় যতই রোমাঞ্চ থাকুক না কেন, বাস্তবে এই বৃষ্টি-বাদলার সময়ে, এডিস ইজিপ্টাই মারতে ঘুম আর ঘাম, দুই-ই ছুটেছে প্রশাসনের কর্তাদের।


কারণ, চিকিৎসকরাই বলছেন, ডেঙ্গি যেভাবে বহুরূপীর মতো রং বদলাচ্ছে, তাতে রোগ নির্ণয় করে, ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করাটাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসক সুমন পোদ্দারের বক্তব্য, "ডেঙ্গি মানেই যে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, ব্রেক বোন ফিভার বলতাম যাকে। এবার ব্যথা নেই বলে দেখা যাচ্ছে। একটা বাচ্চা সর্দি কাশি নিয়ে আসছে। আমরা ধরে নিতাম ডেঙ্গি নয় ফ্লু। এবার পরে পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গি।"


আরও পড়ুন: 'পুরসভা নির্বিকার, আসি যাই মাইনে পাই, কাজ করলে ওভারটাইম চাই' বিস্ফোরক তৃণমূল কাউন্সিলর সব্যসাচী দত্ত

সময় বদলাচ্ছে, ঋতু চরিত্র বদলাচ্ছে, তার সঙ্গে পরিবেশও বদলাচ্ছে। আর এই মোক্ষম সময়ে নিজেকে বদলে ফেলছে ডেঙ্গিও। কারণ, বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা বলছে, জ্বরে আক্রান্তের শরীরের তাপমাত্রার বদল, তাঁর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা,এই সব কিছুই প্রভাবিত হচ্ছে ডেঙ্গির চরিত্র বদল হওয়ার ফলে।


সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সায়ন চক্রবর্তী বলেন, "সাইটোকাইন স্ট্রর্মের কারণে রোগীদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রক্রিয়া বেগড়বাই করে, শরীরের ক্ষতি হয়। দ্বিতীয়মবার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা"

পুজোর আগে এই সময়টায় ঘরে ঘরে জ্বর। হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে জ্বরে আক্রান্তদের। এরই মধ্যে ডেঙ্গির প্রকোপের খবর বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আতঙ্ক বাড়ছে শিশুদের নিয়ে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দেব রায় বলেন, "বাড়িতে থেকে সময় নষ্ট করবেন না। জ্বর হলেই ডেঙ্গি পরীক্ষা করতে হবে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে আর কিছু করার থাকবে না।"

সেপ্টেম্বরের শুরুতে নাইসেডের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গির ডেন্ভ্ (denv) টু ও ডেন্ভ্-৩ স্ট্রেনের দাপট বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গির সাধারণত চারটি প্রজাতি। তার মধ্য়ে এই দুই প্রজাতি সবথেকে বেশি সংক্রামক। চলতি বছরে ডেঙ্গির ১২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে নাইসেড। এর মধ্য়ে ৯৩-টিতে ডেন্ভ্-৩ এবং ২৭-টিতে ডেন্ভ্-২ প্রজাতির হদিশ মিলেছে।

নাইসেড সূত্রে খবর, গতবছর, মোট ৭১৮টি নমুনার মধ্যে ৩৮১-টিতে ডেন্ভ্-৩ এবং ৩১৭-টিতে ডেন্ভ্-২ প্রজাতির হদিশ মেলে।
ফলে ডেঙ্গির চরিত্র বদল নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগে চিকিৎসকমহলও। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার জমা জলে ডিম পাড়ে এডিস ইজিপ্টাই, দীর্ঘদিনের এই ভাবনাটাই বদলে দিচ্ছে ডেঙ্গির এখনকার হাভভাব। অর্থাৎ অভ্যাসের বদল ঘটেছে। 


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ গৌতম আদিত্যর কথায়, "ডেঙ্গি ভয়াবহ, তার কারণ এটা পরিষ্কার জমা জলে শুধু নয়, নোংরা জলেও জন্মায়। গবেষণা করে ২০১৫ এবং ২০১৮-তে দেখিয়েছি আমরা। ড্রেন পরিষ্কার না হলে বাড়বে।"

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা জয় পেয়েছি। মশার বিরুদ্ধে জয় কীভাবে আসবে? অপেক্ষা তা নিয়েই।