আর জি কর মেডিক্যালের নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল যে তরুণমুখগুলি, সেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম প্রধানমুখ ছিলেন ডা, অনিকেত মাহাতো।  যিনি অনশনে ছিলেন। আবার শাসকদলের পক্ষ থেকে তাঁদেরই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, যে চিকিৎসকরা ধর্মঘটে গেলে, আর তাতে একজন রোগীও মারা গেলে, তাঁর ও ডা. দেবাশিস হালদারের বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় FIR করা হবে। অনিকেত মাহাতো, যিনি আন্দোলনের মঞ্চ থেকে হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদী বহু মানুষের কণ্ঠস্বর।  নবান্নর বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রীর দশহাত দূরে বসে বলেছেন, "উনি বলতে দিলে তো বলব!"


এবিপি আনন্দর যুক্তি-তক্কো অনুষ্ঠানে এসেও অনশন মঞ্চে বলা কথাগুলোই তুলে ধরলেন অনিকেত। তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুলেছেন শাসক দলের নেতা, কিন্তু সব অভিযোগ নস্যাৎ করে অনিকেত বললেন, প্রথম দিন থেকেই একটা বিষয়ই মাথায় ছিল, একটা হাসপাতালের মধ্যে, একটা মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে এই ধরনের নারকীয় পৈশাচিক ঘটনা কোনওদিন তাঁরা দেখেননি। 'সহপাঠী হিসেবে আমি অনিকেত কী করতে পারি। এই ভাবনা থেকেই আমার আন্দোলন শুরু। ' 


চিকিৎসকদের অনশন প্রত্যাহারের পর থেকেই একটা কথা শোনা গিয়েছিল, সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাহলে আন্দোলন কি শেষ ? অনিকেত জানালেন, না আন্দোলন শেষ নয়, একটা কর্মসূচি প্রত্যাহার হয়েছে মাত্র। আন্দোলন তখনই শেষ হবে যেদিন 'অভয়া', তাঁর সহপাঠী বিচার পাবেন। 


অনিকেত বলেন, সেদিন , ৮ অগাস্ট দেহ উদ্ধারের পর তাঁরা দেখেন, প্রশাসন ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চাইছে। কিন্তু সেই সময় চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করা ছেলে-মেয়েরা বুঝেছিলেন, এই ঘটনা আত্মহত্যা হতে পারে না। সেই ভাবনা থেকেই আন্দোলনের শুরু। এখন বিভিন্ন মহল ও রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলছে, এই আন্দোলন থেকে তাহলে কী পাওয়া গেল ? 'আমরা নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আমরা পেলাম সিপি-র ট্রান্সফার। আমরা দেখলাম ডিএমই এবং ডিএইচএস এর ট্রান্সফার, ডিসি নর্থের ট্রান্সফার। সেই সঙ্গে বেশ কিছু দাবি আমরা আদায় করে এনেছি। ' 


অনিকেত আরও বলেন, সিবিআই শিয়ালদা কোর্টে যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে একমাত্র সঞ্জয় রায়েরই নাম উল্লেখ করেছে, এই দাবির সঙ্গে তাঁরা সহমত নন। 'যাঁর দেহে ২৩ টা আঘাতের চিহ্ন, আর হাসপাতালে চেস্ট মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে, একটা সেমিনার রুমের ভিতরে এই নারকীয় কাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকে, তাহলে আমরা মনে করি একজন ব্যক্তির পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। তাহলে আমরা চার্জশিটকে আমরা মানব কী করে....এই জায়গা থেকে আমরা মনে করি তদন্ত প্রক্রিয়া আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন'। অনিকেত জানিয়ে দেন , সেই বিষয়টি স্বচ্ছভাবে সামনে না আসা পর্যন্ত, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই জারি থাকবে। 


আর জি কর মেডিক্যালে  চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর যে বিষয়টি আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, তা হল থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতি। যার বিরুদ্ধে বারবার গর্জে উঠেছেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির অন্যতম একটি হল কলেজগুলোতে 'থ্রেট কালচার' বন্ধ করা। কিন্তু নবান্নর বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা যখন থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সরব হন, তখন অত্য়ন্ত ইঙ্গিতপূর্ণভাবে পাল্টা থ্রেট কালচারের অভিযোগ শোনা যায় মুখ্য়মন্ত্রীর গলায়।  মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, 'ডায়মন্ড হারবারাের কেসটা আপনারা দেখলেন, এরকম আগেও হয়েছে। নর্থ বেঙ্গল মেডিক্য়ালে। আমার মেয়রও ঘেরাও ছিল। জোর করে ইস্তফা দেওয়ানো হল। এটাও তো থ্রেট কালচার। ' থ্রেট কালচারের অভিযোগে আর জি কর মেডিক্যালে যে ৫৯ জন ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা কেন করা হল স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি ছাড়াই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। 


এ প্রসঙ্গে এদিন অনিকেত বলেন, 'শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষার স্বাধীকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী কি প্রিন্সিপালকে একবারও প্রশ্ন করেছেন, এই ৫৯ জনকে কেন সাসপেন্ড করা হল ? ... মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। এক সময় শাসক ইংরেজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, যতক্ষণ এ শরীরে এক ফোঁটাও রক্তথাকবে, এই বিশ্ব বিদ্যালয়কে গোলাম তৈরি করার যন্ত্রশালায় পরিণত হতে দেব না । এই ছিল সেদিনকার প্রিন্সিপালের বক্তব্য। শিক্ষার স্বাধীকার বলতে আমরা এই জায়গাটা চাইছি। ' অনিকেত বলেন, শিক্ষার স্বাধীকার না থাকলে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য বিলাপে পরিণত হবে রাজ্য সরকারের এই প্রচেষ্টার দ্বারা। '


আরজি করের নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই চলবে আইনি ভাবে, রাজপথেও। জানিয়ে দেন অনিকেত। বলেন , 'আমাদের লড়াই থেকে পিছিয়ে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। শনিবার গণকনভেনশনের ডাক দিয়েছি, সেখান থেকেই আমাদের আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা তৈরি হবে'