ঝিলম করঞ্জাই ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: ডেঙ্গি-বাহক (Dengue) এডিস (Aedes) মশার থেকে বেশি পরিমাণে জন্মাচ্ছে ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস (Anopheles) মশা। উদ্বেগ বাড়ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) জুলজি বিভাগের (Zoology Department) গবেষণায়। গবেষকদের দাবি, নোংরা জলে নয়, চরিত্র বদলে, পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ছে অ্যানোফিলিস মশা।


বাড়ছে ম্যালেরিয়া, কমছে ডেঙ্গি


ডেঙ্গির থেকেও এবার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ম্যালেরিয়া। মশাবাহিত রোগের আক্রমণে কার্যত তটস্থ বঙ্গবাসী। এরইমধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগের গবেষণায় বাড়ল উদ্বেগ। সেখানকার পতঙ্গবিদ, অধ্যাপক-গবেষকদের দাবি, বর্তমান আবহাওয়ায় দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গি-বাহক এডিস মশার থেকে বেশি পরিমাণে জন্মাচ্ছে, ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস মশা। অর্থাত্‍ বাড়তে পারে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। 


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগের বিশেষ গবেষণাগারে মশার ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য সারা বছর কেমন রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। এই মুহূর্তে কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চলে এডিস মশার প্রকোপ কমলেও দেখা যাচ্ছে নতুন করে বাড়ছে অ্যানোফিলিস মশার প্রকোপ। তাতেই গবেষকদের আশঙ্কা, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমতে পারে কিন্তু বাড়তে পারে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। 


মশাদের আরও একটি চারিত্রিক পরিবর্তন বিশেষজ্ঞদের নজরে এসেছে। এতদিন নোংরা জমা জলে বংশ বিস্তার করত অ্যানোফিলিস মশা, এখন দেখা যাচ্ছে, পরিষ্কার জমা জলেও ডিম পাড়ছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাহক মশা। 


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগের অধ্যাপক গৌতম আদিত্যের বক্তব্য, 'পরিষ্কার জল যেখানে জমে থাকছে সেখানেও বৃদ্ধি হার অনেক বেশি। ডেঙ্গির প্রকোপ কমলেও অ্যানোফিলিস স্টিফেন্সির দ্বারা ম্যালেরিয়া আক্রান্তের রিস্ক থেকেই যাচ্ছে।'


ডেঙ্গি বাহক মশার সংখ্যা কমছে। এখন যাঁরা আক্রান্ত, তাঁরা ঘরের ভিতর জমা জল থেকে হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ক্ষেত, প্লাস্টিকের জিনিসে জমা জল থেকে হচ্ছে। ম্যালেরিয়ার মশা পরিষ্কার জমা জলে হচ্ছে। ফলে ম্যালেরিয়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। 


অ্যানোফিলিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে, বর্তমানে, ডেঙ্গি আক্রান্তের থেকে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। 


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান গৌতম সাহা বলছেন, 'পেস্টিসাইড দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর ভুল প্রয়োগে পেস্টিসাইড রেসিস্ট্যান্ট হয়ে যওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। মশারাও বাঁচতে পারবে। ধীরে ধীরে এগুলোর কার্যকারিতা হারানোর দিকে এগোচ্ছে।' 


আরও পড়ুন: Jalpaiguri: গাড়ির টায়ারে থরে থরে বান্ডিল, বানারহাটে নাকা তল্লাশিতে উদ্ধার ৫০ লক্ষ টাকা, ধৃত ৫


ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া দমন নিয়ে শনিবারই টাউন হলে বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম। মেয়রের দাবি, ডেঙ্গি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অন্যদিকে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের কথায়, 'মানুষও যেমন নিজেদের পরিবর্তন করছে পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে, মশারাও করছে। পুরো বিষয় নিয়ে বৈঠক করছি।'


ডেঙ্গি মোকাবিলায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুরসভা।