সৌভিক মজুমদার, কলকাতা :  অনুব্রত মণ্ডল মামলায় বিচারককে হুমকি চিঠি। আসানসোলের বিশেষে সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর উদ্দেশে হুমকি চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘অনুব্রতকে জামিন না দিলে মাদক মামলায় ফাঁসানো হবে বিচারকের পরিবারকে’। গত ২০ অগাস্ট বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীকে হুমকি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যার পরই গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে।


হুমকি চিঠি পাওয়ার দু'দিনের মধ্যে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ডিস্ট্রিক্ট্র চিফ জাজকে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন। আপাতত কোন পরিস্থিতিতে মুখে তাঁকে পড়তে হচ্ছে আর সেই নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যাতে পারে, সেই পথ জানতে চেয়ে তিনি চিঠি লেখেন। যারপরই ডিস্ট্রিক্ট্র চিফ জাজ মারফত আসানসোলের সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারকের চিঠির একটি প্রতিলিপি এসে পৌঁছয় কলকাতা হাইকোর্টেও।


প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের হেফাজতে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। চালকল থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, একাধিক জায়গায় চলছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নিত্য খানা-তল্লাশি। যার মাঝেই বীরভূমের তৃণমূল সভাপতির জামিন চেয়ে বিচারককে দেওয়া হল হুমকি চিঠি। সবমিলিয়ে এই হুমকি চিঠির প্রেক্ষিতে বিষয়টা যথেষ্ট উদ্বেগজনক হলেও এরকম চিঠিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ বিচারক। তাঁর মতে, নিয়মমাফিক গোটা বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তিনি।


গ্রেফতার অনুব্রত


গত ১১ অগাস্ট  গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআই সূত্রে খবর, ফৌজদারি দণ্ডবিধির 41A ধারায় গরুপাচার মামলায় সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়  বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে। তার আগের দিন সিবিআই-এর হাজিরা এড়ানোর পরদিন  আদালতের নির্দেশনামা ও মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে বোলপুরের নীচুপট্টিতে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই অফিসাররা। অনুব্রতর বাড়ি ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন সিবিআই আধিকারিকরা। বাড়ির সকলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। তল্লাশির পাশাপাশি, দোতলার ঘরে অনুব্রতকে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই অফিসাররা। এরপর গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল জেলা সভাপতিকে। 


আরও পড়ুন- কালই ১৪ দিনের হেফাজতের মেয়াদ শেষ, আজ সিবিআই-এর কোন কোন প্রশ্নের মুখে পড়বেন অনুব্রত?


বিপুল সম্পত্তি কীভাবে
সিবিআই সূত্রে খবর, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বিপুল সম্পত্তি কীভাবে হল, তা নিয়েই মূলত জানতে চাওয়া হবে। একাধিক চালকল, জমি,  সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট সংক্রান্ত নথি সামনে রেখে ফের অনুব্রতর আয়ের উত্স জানতে চাইবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।



 রকেট-গতিতে বেড়েছে অনুব্রত মণ্ডলের পরিবারের আয়
সিবিআই সূত্রে দাবি, গরুপাচার তদন্তে বারবার উঠে এসেছে অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের নাম। অনুব্রতর কাছে ফের সায়গল সম্পর্কেও জানতে চাইবে সিবিআই। খবর সূত্রের। তাঁদের দাবি, ২০১৪-’১৫, এই একবছরে রকেট-গতিতে বেড়েছে অনুব্রত মণ্ডলের পরিবারের আয়। ২০১৫-’১৮, এই ৩ বছরে অনুব্রতর নামে-বেনামে বীরভূম ও কলকাতায় কোটি কোটি টাকায় বিপুল সম্পত্তি কেনা হয়েছে। গরুপাচার মামলায় আদালতে জমা দেওয়া সিবিআই রিপোর্টে দাবি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে দাবি করেছে, চালকল, স্টোন ক্রাশার, জমি, বাড়ি, হোটেল-সহ প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে অনুব্রতর পরিবার ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নামে। যা গরুপাচারের কমিশনের টাকায় কেনা হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান।