বোলপুর: লটারিকাণ্ডে বীরভূমের তৃণমূল (TMC) সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। পঞ্চায়েত প্রধানের মাধ্যমে আসল লটারি প্রাপকের কাছ থেকে অনুব্রত লটারির টিকিট বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ সামনে এল। এক লটারি বিক্রেতাকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)। ওই টিকিট বিক্রেতা সংবাদমাধ্যমে গোটা ঘটনা জানিয়েছেন।


আসল বিজেতার কাছ থেকে লটারির টিকিট হাতিয়ে নেন অনুব্রত!


বৃহস্পতিবার অনুব্রত মণ্ডলের নামে এক কোটি টাকার লটারি-তদন্তে (Lottery) বড় শিমুলিয়া গ্রামে শেখ নুর আলির বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। শান্তিনিকেতনে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে তলব করা হয় নুরকে। লটারি-রহস্যভেদে খতিয়ে দেখা হয় ওই ব্যক্তির সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য। 'গাঙ্গুলী লটারি'র দোকানের মালিক বাপি গঙ্গোপাধ্যায়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। টিকিট তিনিই যাচাই করে দেন বলে দাবি বাপির। তবে কালো টাকা সাদার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।


সিবিআই- শিবির থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে লটারিকাণ্ডে সরাসরি অনুব্রতর যোগসাজশ তুলে ধরেন বাপি। তিনি জানান, আসলে নুর লটারি জিতেছিলেন। মাহিরি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ভজা নামের এক ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে অনুব্রতর হয়ে মধ্যস্থতা করেন। ৮৩ লক্ষ টাকা দেবেন বলে দুই পক্ষের মধ্যে ঠিক হয়। 


আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: অনুব্রতর লটারিপ্রাপ্তিতে চাঞ্চল্যকর দাবি, ছেলের জেতা টিকিট কেড়ে নেওয়া হয়, অভিযোগ বোলপুরের বাসিন্দার


যদিও লটারি বিজেতা নুরের বাবা কটাই শেখের দাবি, গ্রামে ঘুরে ঘুরে লটারির টিকিট বিক্রি করা কালাম শেখের কাছ থেকে টিকিট কিনেছিলেন। জয়ের খবর পেয়ে টিকিট বিক্রি করতে চাননি তাঁরা। কিন্তু বিশ্বজ্যোতির নির্দেশে ভজা এবং 'পার্টি'র লোকেরা এসে চাপসৃষ্টি করে। হুমকিও দেওয়া হয় তাঁদের। টিকিট না দিলে গ্রামে টিকতে পারবেন না, বাঁচতে পারবেন না, এমন হুমকিও দেওয়া হয়। তাতে আতঙ্কে দুই ছেলেকে নিয়ে সাত দিনের জন্য বাড়িছাড়া হন তিনি। 


কিন্তু ফিরে এসেও রেহাই মেলেনি। কটাই জানিয়েছেন, চাপের মুখে পড়ে একসময় বাধ্য হয়ে টিকিট দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ৮৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টিকিট হস্তান্তরের কথা হলেও, কার্যক্ষেত্রে মাত্র ৭ লক্ষ টাকা ধরানো হয় তাঁদের। তাও হাতে পাননি তিনি। ছেলে নুর তা কোও ভাবে উড়িয়ে দেন। 


গরুপাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে লটারিকাণ্ডের হদিশ পান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অনুব্রত এবং তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের অ্যাকাউন্টে একাধিক বার লটারি জেতার টাকা জমা পড়ে বলে দাবি সিবিআই সূত্রের। এখনও পর্যন্ত তিন বছরে পাঁচ বার লটারি বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা জমা পড়ার হদিশ মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। 


অনুব্রত এবং সুকন্যার অ্যাকাউন্টে পাঁচ লটারির টাকা জমা পড়ে বলে বলে দাবি


২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর যে লটারির টিকিটে টাকা ছিল, সেটি জেতেন অনুব্রত। সেই নিয়েই মাস দুয়েক আগে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তার পর একে একে একাধিক লটারির টিকিট সামনে আসতে থাকে। এখনও পর্যন্ত চার জনের নাম উঠে আসছে এই ঘটনায়। টিকিট কেনেন নুর। তার পরই বিশ্বজ্যোতি, যিনি অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ এবং গরুপাচারেও নাম উঠে এসেছে, তিনি ভজার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পর ভজা নুরের বাড়িতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেন। তাঁদের পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে দবি নুরের বাবা কটাইয়ের।