কলকাতা: বার বার তলব করা সত্ত্বেও হাজিরা এড়িয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি (TMC)। গরুপাচার মামলায় বার বার তা তুলে ধরেছে সিবিআই (CBI)। আদালতে দাঁড়িয়ে এ বার কার্যতই গোয়েন্দাদের অসন্তোষের দূর করতে উদ্যোগী হলেন অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) আইনজীবী। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুব্রতর জামিনের আবেদন করেন তিনি। তাতে জানান, প্রয়োজনে নিজাম প্যালেসের পাশেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকবেন তাঁর মক্কেল।
ফের জামিনের আর্জি খারিজ অনুব্রতর, ১৪ দিনের জেল হেফাজত
বুধবার ফের আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয় অনুব্রতকে। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনের আর্জি জানান অনুব্রতর আইনজীবী। এজলাসে রাখা হয় অক্সিজেন সিলিন্ডারও। কিন্তু অনুব্রতর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে সিবিআই-এর আইনজীবী। গরুপাচার মামলায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন। আরও ১৪ দিন তাঁকে হেফাজতে রাখার আর্জি জানান।
তাতে দমে না গিয়ে জামিনের পক্ষে জোরাল সওয়াল শুরু করেন অনুব্রতর আইনজীবী। বলেন, "মক্কেলের বয়স ৬৫। সিওপিডি সহ অনেক শারীরিক সমস্যা। প্রয়োজনে নিজাম প্যালেসের পাশেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকবেন। বীরভূমের ত্রিসীমানায় ঢুকবেন না। ওঁকে শর্তাধীন জামিন দেওয়া হোক।" জামিন না হলে ৪৮ ঘণ্টা পর পর স্বাস্থ্যপরীক্ষার কথাও বলা হয়।
তাতে যদিও সুবিধা হয়নি। বরং একবার ফের অনুব্রতর জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে আদালতে। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর অনুব্রতকে ফের পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনুব্রতর জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে এ দিন সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন, "এটা একটা চেন বিজনেস, একজন নয়, অনেকে জড়িত। অনেক ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। গোটা কেলেঙ্কারিতে পরিবহণের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। গরুপাচারের ক্ষেত্রে আমরা অনেকের জবানবন্দি রেকর্ড করেছি। সেখানেই প্রধান নাম উঠে এসেছে অনুব্রতর। বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়েও সিবিআই তদন্ত করছে, একজন গ্রেফতার হয়েছে। অনেক সরকারি কর্মচারীর ভূমিকা পেয়েছে সিবিআই। হাট থেকে গরু নিয়ে গিয়ে সীমান্তে পাচার করা হয়েছে। এনামুল হক মাস্টারমাইন্ড, তাঁর বয়ান সায়গলের বিরুদ্ধে। সায়গল অনুব্রতর নির্দেশেই টাকা পেতেন।"
সিবিআই-এর আইনজীবী আরও বলেন, "এটা ন্যাশনাল ক্রাইম, ছোটখাটো ক্রাইম নয়। পাচারের জন্য ট্রাকে গরু নিয়ে যাওয়া হত। অনুব্রতর ভূমিকা এখানে অনেক বড়। প্রচুর টাকা নিয়েছেন, মেয়ে ও আত্মীয়দের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। অনুব্রত প্রভাবশালী, কোনও সহযোগিতা করেননি, নোটিস উপেক্ষা করেছেন। হেফাজতের ১৪ দিনেও কোনও সহযোগিতা করেননি। ডাক্তারকে ভুয়ো সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে তাঁর প্রভাব, অথচ তিনি কোনও পদে নেই। শুধু শাসকদলের জেলা সভাপতি।"
৭ সেপ্টেম্বর ফের আদালতে পেশ করতে হবে অনুব্রতকে
যদিও অনুব্রতর আইনজীবীর দাবি ছিল, শুধু সন্দেহের বশে অনুব্রতকে হেফাজতে রাখতে চাইছে সিবিআই। অনুব্রতকে নিশানা করে তদন্ত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। অনুব্রত একটি দল করেন বলেই তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে। তবে শেষমেশ অনুব্রতর জেল হেফাজতেরই নির্দেশ দেয় সিবিআই।