কলকাতা: বাজারের দামের থেকে ডিড ভ্যালু কম দেখিয়ে জমি কেনাবেচা করেছেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal), গরুপাচার মামলার (Cattle Smuggling Case) তদন্তে চাঞ্চল্যকর দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (Enforcement Directorate)। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি দেখানো হয়েছে ৮ লক্ষ টাকায় কেনা। ২০১৩ থেকে '২২-এর মধ্যে অনুব্রত-সুকন্যার সংস্থা এএনএম অ্যাগ্রো কেমের নামে ৯ কোটি ৭১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকার সম্পত্তি কেনা হলেও ডিড ভ্যালু দেখানো হয়েছে ৬ কোটি টাকার। নগদে ১ কোটি টাকার সম্পত্তি কিনে ভাগে ভাগে কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে জমি।


জমির দাম ডিডে কম দেখানো হয়!


বীরভূমে তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত নগদে কোটি কোটি টাকা দিয়ে সম্পত্তি কিনেছেন বলে আগেই দাবি করেছিল ইডি। সেই সংক্রান্ত নথিও হাতে পেয়েছে তারা, যার প্রতিলিপি এসে পৌঁছেছে এবিপি আনন্দের হাতে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের ১০ থেকে ১৭-র মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার সম্পত্তি কেনেন অনুব্রত। বোলপুরের কালিকাপুর মৌজায় নগদে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়। শুধু সম্পত্তি কেনাই নয়, ২৫ লক্ষ টাকার জমির বাজারমূল্য ৮ লক্ষ দেখানো হয় বলেও দাবি ইডি-র। স্ত্রী ছবি মণ্ডল, মেয়ে সুকন্যামণ্ডল, ভোলে ব্যোম চালকল এবং নিজের নামেও অনুব্রত সম্পত্তি কেনেন বলে দাবি ইডি-র।


একটি নথিতে দেখা গিয়েছে, ২০১৬, ২০২০ এবং ২০২১ সালে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়। ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার সম্পত্তি কেনার নথি ইডি-র হাতে পৌঁছেছে বলে খবর। এই অধিকাংশ সম্পত্তিই নগদ টাকায় কেনা হয় বলে জানা গিয়েছে। এত নগদ টাকা কোথা থেকে পেলেন অনুব্রত, গরুপাচারের টাকাই সম্পত্তি কিনতে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা, জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।


আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: ছ'দিনে সাড়ে ছ'কোটির সম্পত্তি কেনেন অনুব্রত, লেনদেন নগদেই, চাঞ্চল্যকর দাবি ইডি-র


এ নিয়ে বুধবার দিল্লিতে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অনুব্রতকে। কিন্তু এত টাকা কোথা থেকে এল, তা নাকি বলতে পারেননি অনুব্রত! বরং তিনি নাকি জানিয়েছেন, টাকা কোথা থেকে এল মনে নেই তাঁর! ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, অনুব্রত তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। তাতে অসন্তুষ্ট তদন্তকারীরা। আসানসোল জেলেও এর আগে অনুব্রত একই আচরণ দেখান বলে দাবি তাঁদের। এই অসহযোগিতাকে হাতিয়ার করে অনুব্রতকে ফের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। শুক্রবারই ফের আদালতে তোলা হবে অনুব্রতকে। 


ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বোলপুরের কালিকাপুর মৌজায় কেনা হয়েছিল ওই সমস্ত জমি। কিন্তু নগদে এত টাকা কোথা থেকে এল, প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ইডি-ও। তদন্তকারীদের দাবি, ভোলে ব্যোম চালকলকে সামনে রেখে স্ত্রী ছবি মণ্ডলের নামে ওই সমস্ত জমি কেনেন অনুব্রত। নিজের নামেও কেনেন জমি। 


ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে নিজের নামে দেড় কোটি টাকার সম্পত্তি কেনেন অনুব্রত। ইডি-র দাবি, বাজারের দামের থেকে ডিড ভ্যালু কম দেখানো হয়েছে কেনাবেচায়। ২৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তিকে ৮ লক্ষ টাকার বলে দেখানো হয়েছে, খবর ইডি সূত্রে।


সূত্রের খবর, অনুব্রতর কাছ থেকে মূলত টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইছে ইডি। কয়েক বছরের মধ্যে কী ভাবে রকেটের গতিতে অনুব্রতর সম্পত্তি বেড়েছে, টাকা কোথা থেকে এসেছে, রাজনৈতিক নেতা অনুব্রতর রোজগারই বা কী, এসবই জানতে চাইছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।


কোটি কোটি টাকা এল কোথা থেকে, জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা


সূত্রের খবর, অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যার রাইস মিলের অ্যাকাউন্টে কী ভাবে কোটি কোটি টাকা এল, তা জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি, অনুব্রতর পরিচারক বা কর্মী, যাঁরা কয়েক হাজার টাকা বেতন পান, তাঁদের অ্যাকাউন্টে কীভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা এল, সেটাও ইডি-র প্রশ্ন। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের বয়ানকে সামনে রেখেই বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে জেরা করছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।