কলকাতা: আইনি টানাপোড়েন চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। অবশেষে দোলের দিনেই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হেফাজতে দিল্লি যেতে হল গরুপাচার মামলায় (Cattle Smuggling Case) ধৃত বীরভূমের (Birbhum News) জেলা তৃণমূল (TMC) সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal)। আসানসোল থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি পর্যন্ত সেই যাত্রাপথে সঙ্গী হল বিতর্কও। কটাক্ষও উড়ে এল। 


আসানসোল জেলের বাইরে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী

মঙ্গলবার, ভোর ৫টা বেজে ৪২ মিনিটে আসানসোল জেলের বাইরে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ছিলেন একজন ইন্সপেক্টর, তিন জন সাব ইন্সপেক্টর-সহ ১২ জন সশস্ত্র পুলিশ। ভোর ৬টার কিছু পরে খুলে যায় জেলের গেট। সাড়ে ৬টা নাগাদ, অনুব্রত মণ্ডলের জিনিসপত্র একে একে গাড়িতে তোলা হয়।

এর পর ৬টা বেজে ৩৫ মিনিটে সেল থেকে তাঁকে জেল আধিকারিকের অফিসে আনা হয়। ৬টা বেজে ৪৩ মিনিটে জেল থেকে বের করা হয় অনুব্রতকে। পুলিশে ঘেরাটোপে ছিলেন তিনি। একে একে গাড়িতে তোলা হয় ব্যাগ। ওঠেন অনুব্রতও।

জেল থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তরও দেননি অনুব্রত। যে কনভয় অনুব্রতকে আসানসোল থেকে কলকাতায় নিয়ে আসে, তাতে মোট চারটি গাড়ি ছিল। কনভয়ের প্রথমে ছিল একটি পাইলট কার। তার পরেই রূপোলি রঙের স্করপিও গাড়িতে ছিলেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি।

অনুব্রতর গাড়ির পিছনে ছিল আরও একটি পাইলট কার। অনুব্রতর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে, কনভয়ের শেষে রাখা হয়েছিল একটি অ্যাম্বুল্যান্সও। সেখানে ছিলেন মেডিক্যাল অফিসার।


এর পর সকাল ৮টা বেজে ৫০ মিনিটে বর্ধমানের শক্তিগড়ে একবার থামে কনভয়। সেখানে একটি হোটেলে প্রাতরাশ সারেন অনুব্রত। ওই হোটেলে  তৃণমূল নেতার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় এক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা এবং অনুব্রতর মেয়ের গাড়িচালককে।

প্রায় আধ ঘণ্টা হোটেলে থেকে, সকাল ৯টা বেজে ২০ মিনিটে শক্তিগড় থেকে ফের কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয় গাড়ি। ১০৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সকাল ১১টা বেজে ৯ মিনিটে জোকার ESI হাসপাতালে পৌঁছয় অনুব্রতর গাড়ি। সেখানেও সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।


আরও পড়ুন: Anubrata Mandal : অনুব্রত শুনানিতে টানটান নাটক, রাতেই বাড়িতে সশরীরে হাজিরা দিতে নির্দেশ বিচারপতির

প্রায় ৩ ঘণ্টা পর, দুপুর ১টা বেজে ৫৮ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বের হন অনুব্রত। আর তাঁকে দেখা মাত্রই, কয়েকজন 'গরু চোর' বলে কটাক্ষ ছুড়ে দেন। হাসপাতাল থেকে অনুব্রতকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসাররা।

দুপুর ২টো বেজে ৪০ মিনিটে অনুব্রতকে নিয়ে কলকাতা বিমাবন্দরে পৌঁছয় ইডি। সেখানে VIP লাউঞ্জে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন তিনি। সন্ধের বিমানে
দিল্লি উড়ে যান গরুপাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত।

দোলের দিন অনুব্রতর এই দিল্লি যাত্রা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা পোস্ট করেন বিজেপি-র রুদ্রনীল ঘোষ। তবে সেখানেই শেষ নয়।


রাত ৯টা নাগাদ অনুব্রতকে নিয়ে দিল্লি পৌঁছয় ইডি। হুইলচেয়ারে বসিয়ে বিমানবন্দর থেকে বার করা হয় তাঁকে। দিল্লিতে প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় অনুব্রতর। রাতে রাা হয় ইডি-র দফতরে। 


গত ১৯ ডিসেম্বর অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ায় জন্য ইডি-র আবেদনে, ছাড়পত্র দিয়েছিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। সেই দিন দুপুরেই, অনুব্রতর বিরুদ্ধে একবছর আগে, তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূল কর্মী শিবঠাকুর মণ্ডল।

সঙ্গে সঙ্গে মামলা দায়ের করে পরের দিনই সেই মামলায় অনুব্রতকে সাতদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। বিরোধীরা অভিযোগ তোলে অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা রুখতেই পরিকল্পনা করে মিথ্যে মামলা দায়ের করানো হয়েছিল শিবঠাকুর মণ্ডলকে দিয়ে।


দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর দিল্লিতে ইডি হেফাজতে অনুব্রত


এর পরই গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে তৃণমূল নেতা শিবঠাকুর মণ্ডলের করা খুনের চেষ্টার অভিযোগের প্রসঙ্গ।