বর্ধমান: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর দিল্লি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal)। কিন্তু আসানসোল জেল থেকে কলকাতা আসার পথেও বিতর্কে জড়ালেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি (TMC)। শক্তিগড়ে একটি দোকানে ঢুকে প্রাতরাশ সারেন অনুব্রত। সেখানে টেবিলে তাঁর সঙ্গে দেখা গেল বীরভূমের তৃণমূল নেতাকে। মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের গাড়িচালকের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। তিন জনের সঙ্গে মোট আধ ঘণ্টা কথা বলেন অনুব্রত। একজনের পরিচয় জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। পুলিশি হেফাজতে থাকা অনুব্রতর সঙ্গে কী ভাবে তাঁরা কথা বলতে পারলেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন (Cattle Smuglling Case)।
যখন পুলিশ ওই দোকানে ঢোকে, আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা
মঙ্গলবার সকালে আসানসোল জেল থেকে বার করা হয় অনুব্রতকে। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৬টা বেজে ৪০ মিনিট। এর পর কড়া নিরাপত্তায় তাঁকে নিয়ে এগিয়ে চলে পুলিশের কনভয়। পথে শক্তিগড়ে থামে কনভয়। রাস্তার ধারের দোকানে খেতে ঢোকেন অনুব্রত। সেখানে সকাল ৫টা ৫০ থেকে ৯ ২০ মিনিট পর্যন্ত ছিলেন। আর সেখানেই অনুব্রতকে নিয়ে যখন পুলিশ ওই দোকানে ঢোকে, আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন কৃপাময় ঘোষ। তিনি বীরভূমে তৃণমূল নেতা। অন্য জন, তুফান মিদ্যা। তিনি অনুব্রতর কন্যা সুকন্যার গাড়ির চালক। তুফানকে আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁর নামেও সম্পত্তি রয়েছে বলে সন্দেহ। তৃতীয় জনের পরিচয় মেলেনি।
মঙ্গলবার দিল্লি যাওয়ার পথে প্রাতরাশে ব্যস্ত অনুব্রতর এই ছবিই এখন আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ অনুব্রত যখন ওই তিন জনের সঙ্গে টেবিলে বসে কথা বলছিলেন, সেই সময় পাশে টেবিলে বসে খেতে দেখা যায় পুলিশকে। কেউ অনুব্রতকে ওই তিন জনের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেননি। তাতেই প্রশ্ন উঠছে যে, আগে থেকে ওই তিন জনের বিশেষ ওই দোকানে বসে থাকে কি সত্যিই কাকতালীয়? অনুব্রত যে ওই দোকানেই খেতে নামবেন, আগে থেকে কি খবর পৌঁছেছিল তাঁদের কাছে? চোখের সামনে সব হতে দেখেও কেন অনুব্রতকে বাধা দিল না পুলিশ?
আরও পড়ুন: Firhad Hakim: 'বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না', তৃণমূল অনুব্রতর পাশেই, ফের জানিয়ে দিলেন ফিরহাদ
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "আমি একটা কথা বলতে পারি, আপাত দৃষ্টিতে আইনে কী রয়েছে, তা আলাদা কথা। আনার সময় নিশ্চয়ই পুলিশ আনবে। কিন্তু যে ঘটনা নিয়ে আলোচনা, বিরোধীদের এই সব অভিযোগ হাস্যকর। অতি স্বাভাবিক ঘটনা এটি। এই সাক্ষাতে কখনও, কোথাও, কোনও বিরাট গুরুত্বপূর্ণ চক্রান্ত কিছু হয় না। এই ব্যক্তিদের যদি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলার দরকার হতো, আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলে দেখা করতেই পারতেন তাঁরা। ফলে নতুন করে কথা জমে আছে, চক্রান্ত করতে হবে, এমন কিছু নয়।"
এ ব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতারও উল্লেখ করেন কুণাল। তিনি বলেন, "এই ধরনের অভিযুক্তরা দূরে যান যখন, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, যখন আমাকে এক জায়গা থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হতো, আমার কোনও বন্অধু বা আত্মীয় হয়ত অনুসরণ করতেন। এসকর্ট ইনস্পেক্টর থাকলে বলতেন, জানতে চাইতেন কোথায় খাওয়ানো হবে, যাতে একটু খাইয়ে দিতে পারেন। এ সব ক্ষেত্রে অন্য কিছু ভাবার কোনও কারণ নেই।"
দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পর ফের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে অনুব্রতর
এ দিন জেল থেকে বেরনোর সময় যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ খোলেননি অনুব্র। অনুব্রতকে এসকর্ট করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয় আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। জোকার ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা হচ্ছে অনুব্রতর। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর, সবুজ সঙ্কেত পেলে ইডি-র হাতে অনুব্রত মণ্ডলকে তুলে দেবেন জেল কর্তৃপক্ষ। এর পর বিমানে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাবেন ED-র অফিসাররা। সঙ্গে থাকবেন একজন মেডিক্যাল অফিসার। দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পর আবার মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে অনুব্রতর।